ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সম্পাদকীয়

বিশেষ সম্পাদকীয়

‘সত্যায়ন’ থেকে মুক্তি ডিজিটাল যাত্রায় আরেক ধাপ

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৫
‘সত্যায়ন’ থেকে মুক্তি ডিজিটাল যাত্রায় আরেক ধাপ

সরকারি চাকরি আর নাগরিক সুবিধা পেতে এদেশের নাগরিকদের অনাবশ্যক কতো দৌড়ঝাঁপই না করতে হয়! নানান বাধ্যবাধকতার বজ্র আঁটুনিই এসব ভোগান্তির মূলে। প্রথমেই নাম করতে হয় ‘সত্যায়ন’ নামের প্রক্রিয়াটির।

প্রক্রিয়াটি স্বাধীন দেশের নাগরিকদের আমলাদের করুণানির্ভর করে রাখারই একটি ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়া। বহু আগে এর প্রয়োজন ফুরালেও ব্রিটিশ শাসনামলে প্রবর্তিত প্রক্রিয়াটি দিনদুই আগ পর্যন্ত বহাল ছিল। অবশেষে তারও অবসান হলো। দেরিতে হলেও বেড়ালের গলায় ঘণ্টাটি বাঁধা হলো। প্রক্রিয়াটির আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি ঘোষণা করেছে সরকার।

সরকারি চাকরির আবেদনে কোনো সনদের সত্যায়িত কপি আর জমা দিতে হবে না। লাগবে না সত্যায়িত ছবিও। মৌখিক পরীক্ষার সময় মূল সনদ দেখালেই চলবে। সচিব কমিটির সুপারিশে সরকার এই ইতিবাচক সিদ্ধান্তটি নিয়েছে।

এবার আসা যাক, ‘সত্যায়ন’ নামের এই বাধ্যবাধকতার সঙ্গে জড়িত ভোগান্তির প্রসঙ্গে। এদেশের নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের এই প্রক্রিয়াটির ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে এতোকাল। ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্র সত্যায়িত না করার উপায়ই ছিল না। প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার স্বাক্ষর নেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। কিন্তু এজন্য গেজেটেড কর্মকর্তাদের পেছন পেছন ঘুরতে হতো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গেজেটেড কর্মকর্তার পরিচিত না হওয়ায় ‘সত্যায়ন’ পেতে বা স্বাক্ষর করাতে নাগরিকদের পড়তে হতো ভোগান্তিতে। গেজেটেড কর্মকর্তারাও অপরিচিত ব্যক্তির সনদে স্বাক্ষর বা সত্যায়ন করতে সহজে রাজি হতেন না। বেশি ভোগান্তির শিকার হতেন প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা। থানা বা জেলা সদরে এসে গেজেটেড কর্মকর্তাদের কাছে ধর্না দিতে হতো তাদের। অনেক ভূক্তভোগী পরে ধরতেন ‘মিথ্যা সত্যায়নের’ পথ। অর্থাৎ নিজেরাই গেজেটেড কর্মকর্তার সিলমোহর ও রাবার স্ট্যাম্প বানিয়ে নিয়ে নিজের সত্যায়ন নিজেই করে নিতেন। একেই বলে ‘বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেঁড়ো’। বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোর প্রায় সব ছাত্রছাত্রীই ‘সত্যায়নের মিথ্যায়ন’ প্রক্রিয়ায় জড়িত। এটা ওপেন সিক্রেট। সাধে কি আর মাঠপর্যায়ের একজন বিসিএস কর্মকর্তা পত্রিকান্তরে বলেছেন,  তাঁর ধারণা বিসিএস পরীক্ষার আবেদনে ৯০ ভাগের বেশি সনদ প্রকৃত কর্মকর্তাকে দিয়ে সত্যায়িত করা হয় না।

যাক, একটি প্রকাণ্ড মিথ্যা সচিব কমিটির বদৌলতে জাতির কাঁধ থেকে নামল এবার! এর ফলে বাঁচবে দেশের মানুষের লক্ষ-কোটি কর্মঘণ্টা, মিটবে যাতায়াতসহ আনুষঙ্গিক খরচের ঝক্কি, কমবে বিড়ম্বনা। গোটা জাতিকে আমলাদের করুণানির্ভর রাখার বাজে সংস্কৃতিতেও পড়বে ছেদ।

সরকার ধীরে ধীরে ভর্তি, ঋণ গ্রহণ, ব্যাংক হিসাব খোলাসহ বিভিন্ন কাজে সত্যায়নের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার কথা ভাবছে। তবে পাসপোর্টসহ কিছু স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে অবশ্য এটা বহাল থাকবে। কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে সেটা থাকতেই পারে। তবে যতোটা সম্ভব এরও ডিজিটাল বিকল্প খোঁজা যেতে পারে। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোতে চালু নাগরিক ও জনবান্ধব প্রক্রিয়ার মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে।

শিক্ষা সচিবও বলেছেন, দেশের সর্বস্তরের ভর্তি অনলাইনে করা সম্ভব, যা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হয়রানি অনেকটাই কমাতে পারে। সব পর্যায়েই ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। আগে চাইলেও অনেক কিছুই করা সম্ভব ছিল না; কিন্তু সর্বাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে এখন সবই করা সম্ভব। দেশের মানুষ এরই মধ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তির নানা সুফল পেতে শুরু করেছেন।

ভোগান্তি কমানোর প্রক্রিয়াটা যেন এনালগ গতিতে না চলে; এখানেও চাই ডিজিটাল গতি। ডিজিটাল হওয়ার বড় শর্ত বিশ্বের সঙ্গে সমান তালে চলা। জনবান্ধব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকারের বড় করণীয় হলো জনগণকে ভোগান্তিমুক্ত করা; তাদের জীবনকে ভারাক্রান্ত না করে, বিড়ম্বিত না করে স্বস্তি দেওয়া, সেবার হাত প্রসারিত করা। এসব কাজে ডিজিটাল প্রযুক্তি হতে পারে বড় নিয়ামক। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তটিকে স্বাগত জানাই। জনগণের জন্য এখনো যতো অনাবশ্যক বাধ্যবাধকতা রয়ে গেছে, সরকার যেন সেগুলোও থেকেও জনগণকে দ্রুত মুক্তি দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৫
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।