ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সম্পাদকীয়

ভেজালমুক্ত খাদ্যপণ্যে বিপ্লব ঘটাবে ‘বসুন্ধরা’!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
ভেজালমুক্ত খাদ্যপণ্যে বিপ্লব ঘটাবে ‘বসুন্ধরা’! বিশেষ সম্পাদকীয়

আগেকার দিনে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র হতো। অনেক সময় সিংহাসনের লোভে রাজাকে মারা হতো খাদ্যে বিষ মিশিয়ে। আর এখন কোটি কোটি মানুষকে পঙ্গু, অথর্ব, ব্যাধিগ্রস্ত করে অকাল মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে। খাদ্যের কাজ জীবন রক্ষা করা। অথচ সেই খাদ্যকেই করে তোলা হচ্ছে জীবনবিনাশী। খাদ্য যেখানে শক্তি ও পুষ্টির আধার, সেখানে ভেজাল মেশানো খাদ্য হয়ে উঠেছে মারণবীজ। খাদ্য থেকে স্বাস্থ্য, বল, আনন্দ-উজ্জ্বল পরমায়ু পাবার বদলে আমরা পাচ্ছি ব্যাধি ও বিষ। বরাভয়ের বদলে পাচ্ছি সমূহ সর্বনাশ। 

বেঁচে থাকার জন্য তিন অপরিহার্য উপাদান, বাতাস, পানি ও খাবার। আমাদের দেশে এই তিনটিকেই করে তোলা হচ্ছে দূষণময়, ভেজালময় আর অনিরাপদ।

খাদ্যে ভেজাল মেশানোর এই বিপজ্জনক কাজটা করছেন এদেশের এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী না বলে এদের বলা উচিত ‘খল বণিক’। কথায় বলে ‘খলের ছলের অভাব হয় না’। এদেরও হয় না। এই খলস্বভাবী, প্রতারক বণিকেরা মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন নিয়ে ছলনার পাশা খেলা খেলছে। চটকদার মোড়কের আড়ালে খাদ্যদ্রব্যে এরা মেশাচ্ছে নানা ক্ষতিকর কেমিক্যাল। দুধে ফরমালিন, জিলাপি চানাচুরে মবিল, বিস্কুট, আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিংকস, জুস, সেমাই, আচার, নুডুলস, মিষ্টিতে মেশাচ্ছে কাপড়ে ও চামড়ায় ব্যবহার্য রং। গুঁড়া মসলায় এরা মেশাচ্ছে কাঠের গুঁড়া,ইটের গুঁড়াসহ নানান অপদ্রব্য।  

এই খল বণিকের দল শিশু খাদ্যও ভেজাল করছে। ভেজালের তালিকা বলে শেষ করা যাবে না।  

ভেজাল খাবার আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দুটোকেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। ভেজাল খাবার খেয়ে মানুষের গন্তব্য হচ্ছে হাসপাতাল। অকাল মৃত্যুর শিকার হচ্ছে মানুষ। শিশুদের বুদ্ধিমত্তা কমে যাচ্ছে, দৃষ্টিশক্তি কমে যাচ্ছে,স্মৃতিশক্তি কমে যাচ্ছে, মেধা কমে যাচ্ছে। এভাবে গোটা জাতির ভবিষ্যত পড়ছে হুমকির মুখে। ভেজালবিরোধী হাজারো অভিযানেও, জেল-জরিমানাতেও এই খল বণিকদের দৌরাত্ম্য রোখা যাচ্ছে না।  

এই যখন অবস্থা তখন এইসব অপ-ব্যবসায়ীদের একহাত নিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। খাদ্যে ভেজালকারী দুষ্টচক্রটির বিরুদ্ধে, মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে পণ্যের দাম বাড়ানোর যে সিন্ডিকেটবাজি, তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন তিনি। খাদ্যে ভেজালমুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করলেন একইসঙ্গে।

জানালেন, দেশবাসীর কাছে ভেজালমুক্ত খাদ্যপণ্য পৌঁছে দিতে বড় ধরনের উদ্যম নিয়ে খাদ্য খাতে আসবে বসুন্ধরা গ্রুপ। বাজারে চাল, ডাল,আটা, চিনিসহ নিরাপদ, ভেজালহীন, কেমিক্যালহীন নিত্য পণ্য সরবরাহ করবে বসুন্ধরা। এটা হবে খল বণিকবৃত্তির বিরুদ্ধে, মানুষকে জিম্মি করে অন্যায় মুনাফাবাজদের বিরুদ্ধে এক সমুচিত প্রতিবাদ।  
  
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) এক জাঁকালো অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (বিএফবিআইএল)-র স্ন্যাকস্ পণ্যের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। এসময় অপ-ব্যবসায়ীদের প্রতি ধিক্কার জানালেন। এদের অপ-তৎপরতার নানা দিক নিয়ে কথা বললেন। নিচে তারই চুম্বক অংশ:


‘আমরা ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকেছি। আশা করি, একটা একটা করে ফুডের যতো রকম আইটেম আছে সব আইটেমে আমরা ইনভল্বড হবো। আমরা বেশ বড় আকারে ফুড-এ আসবো। আশা করছি চাল, ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে আসবো। আমরা একটা ভেজালমুক্ত সমাজ গড়তে চাই। ...আমাদের স্লোগান আছে, ‘আমরা নিরপেক্ষ নই আমরা জনগণের পক্ষে’। ...আমরা সৎভাবে, আপসহীনভাবে ভেজালের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাবো। অনেক দেরি করে হলেও খাদ্যশিল্পে ঢুকেছি। আজকে যে চালের সংকট, এই সংকটের মূলে আমরা ব্যবসায়ীরা। আমাদের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। আমাদের ব্যবসার উদ্দেশ্য মানুষকে ভালবাসা, মানুষের উপকার করা। আমাদের দেশে এখন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী কসাইয়ের মতো হয়ে গেছে। তারা শুধু টাকা ছাড়া কিছুই বোঝে না।
...ঈদের সময় দেখি চিনির দাম বেড়ে যায়। মানুষকে যখন সাহায্য করা উচিত তখন আমরা ব্যবসায়ীরা সুযোগ গ্রহণ করে দাম বাড়িয়ে দিই। আজকে চালের দাম বাড়ার জন্য মিল মালিকদের একটি চক্র দায়ী। ’ 

আরও বললেন, ‘বিশেষ করে যারা এখন ফুডের ব্যবসায়ী তাদের কাছে নীতিমালা বলে কোনো জিনিস নাই। তারা যখন সুযোগ পায় দাম বাড়িয়ে দেয়। ’ 

‘বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু মুনাফা নয়, বরং দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকেই ব্যবসা করে’ জানিয়ে আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘সারা দেশে বন্যা। ট্রান্সপোর্টের সমস্যা হচ্ছে। আমাদের পণ্য পরিবহনে খুব সমস্যা হচ্ছে। তবু আমরা জোর গলায় বলতে পারি কোনো পণ্যের দাম বাড়াইনি, বাড়াবো না। ... মানের ব্যাপারে আমরা আপসহীন। আমরা এ ব্যাপারে আপস করবো না। আমরা খাদ্য নিয়ে রাজনীতি করবো না। মানুষের খাদ্য নিয়ে, রিজিক নিয়ে কারো জুয়া খেলা উচিত না।

‘বসুন্ধরা যেসব সেক্টরে আছে সেসব সেক্টরে নাম্বার ওয়ান’—একথার মধ্য দিয়ে তিনি খাদ্য খাতেও বসুন্ধরা যে নাম্বার ওয়ান হবে, নেতৃত্ব দেবে সেই প্রত্যয়টাই ব্যক্ত করলেন।

আমরাও বলতে পারি খাদ্যখাতেও বসুন্ধরা এক নম্বর হবে গুণে, মানে, নৈতিকতায় এবং দেশ-মাটি-মানুষের প্রতি ভালোবাসার অঙ্গীকারে। আর তাতে খাদ্যপণ্যের জগতে নতুন এক বিপ্লব ঘটবে। আর তা হবে ভেজালমুক্তির বিপ্লব।  আমরা তারই রজতরেখা দেখার অপেক্ষায়।
শুভস্য শীঘ্রম!

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।