চাটমোহর (পাবনা): পাবনার চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের রাউৎকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে।
বিদ্যালয়টিতে আর কোনো শিক্ষক না থাকায় ৮ মাস ধরে একমাত্র শিক্ষক মনিরুজ্জামান একাই সহকারী ও প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিদ্যালয়টিতে একদিকে যেমন শিক্ষকের সঙ্কট, অন্যদিকে সঙ্কট ছাত্রছাত্রীর।
একজন শিক্ষকের সঙ্গে বিদ্যালয়টি চলছে মাত্র প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ২০জন ছাত্র-ছাত্রী দিয়ে। ৪র্থ এবং ৫ম শ্রেণির কোনো ছাত্র-ছাত্রী নেই বিদ্যালয়ে।
সহকারী শিক্ষক মনিরুজ্জামান একাই ৩টি ক্লাসে পাঠদান ও দাপ্তরিক যাবতীয় কাজ করার কারণে কুলিয়ে ওঠতে না পারায় মুখ থুবড়ে পড়ছে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম।
অপরদিকে, পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় ওই বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করাতে চাননা এলাকার অভিভাবকরা।
বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানালেও এর কোনো প্রতিকার হয়নি বলে বাংলানিউজকে জানান একমাত্র শিক্ষক মনিরুজ্জামান।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ১৭ আগস্ট প্রধান শিক্ষক অবসর নেওয়ার কারণে ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্য হয়। প্রধান শিক্ষক থাকাকালে বিদ্যালয়ে ৩ জন সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত ছিলেন।
প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্য হওয়ার ৩ মাসের ব্যবধানে বিদ্যালয় থেকে ২জন সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। এরপর থেকে কর্মরত একমাত্র সহকারী শিক্ষক মনিরুজ্জামন একাই বিদ্যালয়ের সব দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সহকারী শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে ৭, ২য় শ্রেণিতে ৭ এবং ৩য় শ্রেণিতে ৬ জন।
গত প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার ছিল শতভাগ। শিক্ষক না থাকায় চলতি বছরে ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করেনি অভিভাবকরা।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষক না থাকায় বেশির ভাগ দিন ২য় ও ৩য় শ্রেণির কোনো ক্লাস হয় না। ১ম শ্রেণির ক্লাস আর ছোট ছেলে-মেয়েদের সামলানো আমার একার পক্ষে কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’
মনিরুজ্জামান জামান জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কাজ থাকলে তাকে স্কুল ছুটি দিয়ে যেতে হয় সেখানে।
বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাকে একাধিকবার জানানো হলেও আজও কোনো শিক্ষক এখানে দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল কুদ্দুস বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলেছি। ’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, যেসব স্কুলের ৩/৪ জন শিক্ষক রয়েছে সেখানে আরও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। অথচ যেখানে শিক্ষক নেই সেখানে কর্তৃপক্ষের নজর পড়ছে না। স্কুলের একমাত্র শিক্ষক মনিরুজ্জামানকে দৌড়ঝাঁপ করে ক্লাস নিতে হয়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মতিউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানার পর একজন সহকারী শিক্ষককে ওই বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের ব্যাপারটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে ওই সহকারী শিক্ষক এখনও বিদ্যালয়ে যোগ দেননি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১২
প্রতিবেদক: শামীম হাসান মিলন
সম্পাদনা: মো. মাহাবুর আলম সোহাগ, নিউজরুম এডিটর