জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন ‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের শিক্ষকরা।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবন অবরোধ ও পরে দুপুর ২টা পর্যন্ত ‘উপাচার্য প্রত্যাখ্যান মঞ্চে’ তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
সমাবেশে আন্দোলনকারী শিক্ষক অধ্যাপক নঈম সুলতান উপাচার্যকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি একসময় অগণতান্ত্রিক উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু, এখন আপনি নিজেই অগণতান্ত্রিক উপাচার্য হিসেবে উপাচার্য পদ আঁকড়ে রেখেছেন। আপনি শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, তার জন্য আপনার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে না, অন্য কিছুতে লেখা থাকবে, তা আমি জানি না। ’
তিনি অবিলম্বে উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করে গণতান্ত্রিক উপায়ে উপাচার্য নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান উপাচার্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা করেননি। তিনি শিক্ষক সমাজের ৮ দফা দাবি মেনে নেন নি। দাবি মেনে নেওয়ার সক্ষমতা তার নেই। যিনি ক্যাম্পাসে মত প্রকাশের অধিকার দেন না, কোনো ধরনের গণতান্ত্রিক অবস্থাও ক্যাম্পাসে রাখেন নি, তার উপাচার্য পদে থাকার নৈতিক অধিকার নেই। ’
তিনি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।
শিক্ষক সমাজ আন্দোলনের সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন উপচার্যকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি উন্নয়ন বলতে যা বোঝান, আসলে তা উন্নয়ন নয়। আপনাকে ক্যাম্পাসে কেউ চায় না। তাই, আপনি পদত্যাগ করুন। ’
সমাবেশে বক্তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩৩ শতক জমি পল্লী বিদ্যুতকে লিজ দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, রক্ত দিয়ে হলেও পল্লী বিদ্যুতকে এ জমি লিজ দেওয়া থেকে বিরত রাখা হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, অধ্যাপক সোমা মুমতাজ, অধ্যাপক নকিবুর রহমান, অধ্যাপক সালাউদ্দিন ভূঁইয়া, প্রভাষক পারভীন জলি প্রমুখ।
এদিকে, শিক্ষক সমাজ ব্যানারের শিক্ষকরা উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরের পদত্যাগের দাবিতে শনিবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছেন।
শিক্ষক সমাজ সমন্বয় কমিটির সদস্য ও দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সমন্বয় কমিটির একটি সভা আছে। সেখানে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শনিবার থেকে নতুন কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। ’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর অন্যায়ের প্রতিবাদ করার লক্ষ নিয়ে গড়ে ওঠা শিক্ষক সমাজ ব্যানারের শিক্ষকরা প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাহীন গণনিয়োগের বিরোধিতা ও গণনিয়োগ বাতিলে দাবি করে আসছিলেন।
পরবর্তীতে গত ৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে খুন হওয়ার ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘শিক্ষক সমাজ ব্যানার’-এর শিক্ষকরাও প্রতিবাদ করেন এবং বিচার দাবিতে আন্দোল শুরু করেন।
‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের শিক্ষক ও ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুবায়ের আহমেদ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ১৩ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়।
পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করলেও মেধাহীন ও গণনিয়োগের প্রতিবাদে শিক্ষকদের আন্দোলন অব্যাহত থাকে।
সেই আন্দোলনেই পরবর্তীতে উপাচার্য পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়।
শিক্ষক সমাজ ব্যানারের শিক্ষকদের দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে- জুবায়ের হত্যাকা-ের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের সম্মুখীন করার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, সন্ত্রাস বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকা, সন্ত্রাসীদের লালন-পালন, পৃষ্ঠপোষক, অছাত্র সন্ত্রাসীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানোর সুযোগ দেওয়া সর্বোপরি প্রশাসনের মদদ দান বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ এ মামুনকে লাঞ্ছনার বিচার, সব শিক্ষার্থীর সহঅবস্থান নিশ্চিতকরণ, গণনিয়োগ বন্ধ ও রিভিউ কমিটির মাধ্যমে অযোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল, ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের অপতৎপরতা বন্ধ করা, বিভিন্ন পর্বে ভর্তি ব্যয়, পরীক্ষা ও উন্নয়ন ফি বৃদ্ধি বন্ধ করাসহ ৭৩-এর অধ্যাদেশ পূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষে উপাচার্য প্যানেল ছাড়াও বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে (ডিন, সিন্ডিকেট, সিনেট ও রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট) বিধি মোতাবেক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ সমুন্নত রাখা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১২
সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর