জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরের পদত্যাগের দাবিতে ‘শিক্ষক সমাজ’-এর শিক্ষকরা সর্বাত্মক ধর্মঘট ও উপাচার্যের কার্যালয়ে উপাচার্যকে অবরোধ রাখার কর্মসূচি পালন করছেন।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত ধর্মঘট পালন ও বিভিন্ন অনুষদ ভবনে গিয়ে প্রচারণা চালানোসহ উপাচার্য কার্যালয়ে উপাচার্যকে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
বেলা সাড়ে ১১টায় প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যকে অবরোধের জন্য শিক্ষকরা সেখানে হাজির হলেও সে সময় উপাচার্য কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না।
‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের আন্দোলনরত শিক্ষক ও দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বাংলানিউজকে বলেন, ‘পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত ধর্মঘট ও উপাচার্য কার্যালয়ে উপাচার্য অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছি। যদিও উপাচার্য তখন কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না। ’
মঙ্গলবারের সর্বাত্মক ধর্মঘট ও উপাচার্য অবরোধ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন, অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক মানস চৌধুরী, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক এনাম উল্যা পারভেজ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এ মামুন, সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক শরিফ উদ্দিন, জামাল উদ্দিন রুনু প্রমুখ।
‘শিক্ষক সমাজ’-এর শিক্ষকরা রোববার পর্যন্ত সর্বাত্মক ধর্মঘট ও উপাচার্যের কার্যালয়ে উপাচার্যকে অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর অন্যায়ের প্রতিবাদ করার লক্ষ নিয়ে গড়ে ওঠা ‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের শিক্ষকরা প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাহীন গণনিয়োগের বিরোধিতা ও গণনিয়োগ বাতিলের দাবি করে আসছিলেন।
পরবর্তীতে ৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে খুন হওয়ার ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের শিক্ষকরাও প্রতিবাদ করেন এবং এর বিচার দাবি করেন।
‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের শিক্ষক ও ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুবায়ের আহমেদ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৩ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিস্কার করে।
পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেলেও মেধাহীন ও গণনিয়োগের প্রতিবাদে শিক্ষকদের আন্দোলন অব্যাহত থাকে।
সেই আন্দোলনই পরবর্তীতে উপাচার্য পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়।
‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারের শিক্ষকদের দাবির মধ্যে রয়েছে- জুবায়ের হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের সম্মুখীন করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, সন্ত্রাস বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকা, সন্ত্রাসীদের লালন-পালন, পৃষ্ঠপোষক, অছাত্র সন্ত্রাসীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানোর সুযোগ দেওয়া সর্বোপরি প্রশাসনের মদদ দান বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ এ মামুনকে লাঞ্ছিত করার বিচার, সব শিক্ষার্থীর সহঅবস্থান নিশ্চিতকরণ, গণনিয়োগ বন্ধ ও রিভিউ কমিটির মাধ্যমে অযোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল, ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের অপতৎপরতা বন্ধ, বিভিন্ন পর্বে ভর্তি ব্যয়, পরীক্ষা ও উন্নয়ন ফি বৃদ্ধি বন্ধ এবং ৭৩-এর অধ্যাদেশ পূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষে উপাচার্য প্যানেলসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে (ডিন, সিন্ডিকেট, সিনেট ও রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট) বিধি মোতাবেক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ সমুন্নত রাখা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১২
সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর