ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

পরীক্ষায় প্রথম হয়েও নিয়োগ পাচ্ছেন না, ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি!

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩
পরীক্ষায় প্রথম হয়েও নিয়োগ পাচ্ছেন না, ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি!

বরগুনা: বরগুনার আমতলী উপজেলার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হলেও তাকে নিয়োগ না দিয়ে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

ভূক্তভোগী ব্যক্তি নিয়োগ না পেয়ে হতাশ হয়ে ইউএনওসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে লোক নিয়োগের জন্য ২০২২ সালের ১৫ অক্টোবর একটি দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।  

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১০ প্রার্থী আবেদন করেন। এর মধ্যে বিজ্ঞপ্তির সব শর্ত পূরণ করে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আবুল হোসেন সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ লাভের জন্য আবেদন করেন। আবেদন জমা নেওয়ার নির্ধারিত তারিখ শেষ হলে একই সালের ৯ ডিসেম্বর বরগুনার সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদালয়ের কেন্দ্রে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

পরীক্ষায় ১০ জনের মধ্যে সাতজন অংশ নেন। নিয়োগ পরীক্ষায় শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবুল কালাম, আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিয়াউল হক মিলন, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী মো. আনোয়ার হোসেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব মো. আব্দুস সালাম, সদস্য দক্ষিণ রাওঘা নূর আল-আমিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সামসুল আলমসহ সবাই উপস্থিত ছিলেন।  

ওই নিয়োগের লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী মো. আবুল হোসেন লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ৭৭ নম্বর পেয়ে প্রথম হন। পরীক্ষার এ ফলাফল নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস ছালাম প্রথম হওয়া শিক্ষক আবুল হোসেনকে নির্বাচিত করা হয়েছে বলে জানান।

কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার দুই মাস পার হলেও আবুল হোসেনকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ না দিয়ে প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সালাম ঘোরাতে থাকেন। একপর্যায়ে আবুল হোসেন প্রধান শিক্ষকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে বলে জানান। অন্যথায় নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে লোক নিয়োগ করা হবে।  

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জানুয়ারি আবুল হোসেন আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগী আবুল হোসেন বলেন, আমি নিয়োগ পরীক্ষায় ৭০ নম্বর পেয়ে প্রথম হই। তারপরও দুই মাস ধরে প্রধান শিক্ষক আমাকে নিয়োগপত্র না দিয়ে ঘুরাচ্ছেন। এখন ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করছেন। টাকা না দিলে নতুনভাবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লোক নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন।

অভিযুক্ত শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস ছালাম টাকা চাওয়ার বিয়টি অস্বীকার করে বলেন, মো. আবুল হোসেন পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু তাকে বিদ্যালয়ের কমিটির সদস্যরা নিতে চাচ্ছেন না।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভা ডেকে এ বিষয়ে সিদান্ত নেওয়া হবে।

শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি বরগুনা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবুল কালাম বলেন, নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের উপস্থিতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষায় মো. আবুল হোসেন প্রথম হয়েছেন। এখন কী কারণে তাকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না, সে বিষয়টি আমার জানা নেই।

আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক মিলন বলেন, স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় মো. আবুল হোসেন প্রথম হয়েছেন। এ বিষয়ে আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এ ব্যাপারে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।