ঢাকা, সোমবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ জুন ২০২৪, ০৯ জিলহজ ১৪৪৫

শিক্ষা

টানা জার্নিতে অসুস্থ ইবির সেই ভুক্তভোগী ছাত্রী

ইবি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
টানা জার্নিতে অসুস্থ ইবির সেই ভুক্তভোগী ছাত্রী ক্যাম্পাস গেটে ফুলপরী ও তার বাবা আতাউর রহমান

ইবি: হল প্রভোস্টের ডাকে আজও বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার সহযোগীদের হাতে নির্যাতনের শিকার প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন।

এ নিয়ে পাবনা থেকে টানা চারদিন কুষ্টিয়ায় গেছেন তিনি।

আর টানা ৪ দিন দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে বাবা আতাউর রহমানের সঙ্গে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে পৌঁছান ফুলপরী। পরে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলাম ও জয়শ্রী সেন তাকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক থেকে ভুক্তভোগীকে হলে নিয়ে যান।  

ক্যাম্পাসে এসেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ফুলপরী। তার চোখেমুখে দেখা যায় অসুস্থতা ও ক্লান্তির ছাপ। এসময় গণমাধ্যমকর্মীরা তার শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চাইলে তিনি এটুকুই বলেন, ‘খুব বেশি ভালো না। ’ 

এ সময় মেয়ের অবস্থার বর্ণনা দেন ফুলপরীর বাবা আতাউর রহমান।  

তিনি বলেন, আমার বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে আসতে অনেক বেগ পোহাতে হয়। বাড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার পথ ভ্যানে পাড়ি দিয়ে আসতে হয় পদ্মানদীর ঘাট পর্যন্ত। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় শিলাইদহ (কুমারখালী, কুষ্টিয়া) ঘাটে পৌঁছাতে হয়। ঘাট থেকে ব্যাটারিচালিত অটোযোগে আলাউদ্দীন নগরে আসতে হয়। সেখান থেকে বাস অথবা ব্যাটারিচালিত অটোযোগে চৌড়হাস আসতে হয়। চৌড়হাস থেকে সর্বশেষ লাইনের গাড়িতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে হয়।

আতাউর রহমান জানান, এটুকু পথ আসা যাওয়ায় মোট ৮ ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবাররই দুইজনের ৬শত টাকা ভাড়া লাগছে। এভাবে টানা আসা যাওয়ায় আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়ছি যেখানে আমার একদিন কাজ না করলে পেট চলে না। কোনো কাজ করতে পারছি না। এখন পর্যন্ত আসা-যাওয়ার খরচ সম্পূর্ণ আমাকেই দিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রশাসন চাইলে নিরাপত্তা দিয়ে ক্যাম্পাসেই রাখতে পারতো আমার মেয়েকে। এ পর্যন্ত মোট চারদিন আসছি ক্যাম্পাসে। দেখা গেছে, বিকেলে ফোন দিচ্ছে সকালে আসুন। তখন সকালে কিছু খেয়েই ভ্যানে করে মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে পড়ি। তবু আসছি। কেবল সুষ্ঠু তদন্ত, সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে। মেয়েটা আমার শারীরিকভাবে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে।  

এভাবে টানা জার্নি করে কোনো অনীহা কাজ করছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আতাউর রহমান দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, না কোনো অনীহা নাই। সুষ্ঠু বিচারের জন্য আমাদের আসতে হবেই। নির্যাতনের বিচাররের দাবিতে আমরা আসব, না আসলে বিচার পাব না।  

প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত প্রায় তিনটা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন করা হয় নবীন ওই ছাত্রীকে। ভুক্তভোগী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তারা ওই ছাত্রীকে মারধর করে তার বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে রাখেন।

১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয় পেয়ে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান ভুক্তভোগী ছাত্রী। র‌্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে মঙ্গলবার প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত দেন তিনি।  

বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। হাইকোর্টের নির্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়েন অভিযুক্তরা।   

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।