ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জাবিতে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

জাবি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৩
জাবিতে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (১২ মার্চ) ইতিহাস বিভাগের নতুন তিনজন শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিয়োগ বোর্ড সম্পন্ন হয়েছে।

বিগত ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর ও ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে এ নিয়োগ বোর্ড সম্পন্ন হয়।

জানা গেছে, প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফলাফল ধারী ছাত্রী ৪৩ ব্যাচের মারিয়া আক্তারকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মারিয়া আক্তার এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ-৫, স্নাতক পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৭৬ ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় ৩.৭৭ পেয়েছিলেন।

এ দিকে শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত তিনজন হলেন- ইতিহাস বিভাগের ৩৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী  শামসুদ্দোহা মনি, ৪০ ব্যাচের শিক্ষার্থী সারাফত আদনান বিপ্লব ও ৪২ ব্যাচের শিক্ষার্থী শারমিন সুলতানা।

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরাফত আদনান বিপ্লব প্রথম বর্ষে ফলাফল খারাপ করায় পরবর্তী ব্যাচের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৬৭ পেয়েছেন। শারমিন সুলতানা এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৪৪, এইচএসসি পরীক্ষায় ৪.৫০, স্নাতক পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৫৯ ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় ৩.৬৭ পেয়েছেন। অপর প্রার্থী শামসুদ্দোহা মনি এসএসসি পরীক্ষায় ৪.৮৩, এইচএসসি পরীক্ষায় ৪.৩৩ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় ৩.৫০ পেয়েছিলেন।

অধিক যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে বিভাগীয় সভাপতি ও প্রভাবশালী শিক্ষকদের পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ায় অসন্তোষ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিভাগের একাধিক শিক্ষক।

বিভাগের শিক্ষকরা জানান, প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফলাফল ধারী ছাত্রী ৪৩ ব্যাচের মারিয়া আক্তারকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মারিয়া আক্তার এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ ৫, স্নাতক পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৭৬ ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় ৩.৭৭ পেয়েছিলেন। এছাড়াও সুপারিশপ্রাপ্ত তিনজনের চেয়েও আরও অনেক যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন করেছিলেন। কিন্তু যোগ্যতাকে মূল্যায়ন না করে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা আরও জানান, প্রায় ৩ বছর ও ৫ বছর আগে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো প্রকাশ হয়েছিল। সাধারণত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার পর নিয়োগ সম্পন্ন না হয়ে দীর্ঘ সময় পার হলে এবং বিভাগের নতুন ব্যাচ পাস করে বের হলে পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। অথচ ইতিহাস বিভাগে সভাপতি ও কিছু শিক্ষক নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে পুরোনো বিজ্ঞপ্তি অনুসারেই নিয়োগ সম্পন্ন করতে যাচ্ছে। ফলে ৪৪ ও ৪৫ ব্যাচের পাস করা শিক্ষার্থীরা আবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে ।

জানা যায়, নিয়োগ কার্ড ইস্যু না করে সাক্ষাৎকারের সময় শুধু মেসেজ দিয়ে জানানো হয়েছে, যা নিয়োগ বিধিমালার লঙ্ঘন। এর ফলে অনেকেই আসতেই পারেন নি। এমনকি অর্ধেকেরও বেশি আবেদনকারী উপস্থিত হতে পারেনি। এছাড়াও পাঁচ বছরের আগের বিজ্ঞাপনে আবেদনকারী অনেকে বিদেশেও আছে, এতে আবেদনকারীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক লুৎফুল এলাহী বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য যাদের নাম সুপারিশ করা হয়েছে শোনা যাচ্ছে, তাদের চেয়ে ভালো ফলাফলধারী অনেকজন আবেদন করেছিলো। একাধিক গবেষণা পত্র থাকা সত্ত্বেও যাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও কিসের ভিত্তিতে তাদের সুপারিশ করা হয়েছে সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।

অধ্যাপক এলাহী আরও বলেন, শুনতে পাচ্ছি শারমিন সুলতানাকে সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু উনি যে বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে আবেদন করেছেন, সেটার আবেদনের শেষ সময় ছিলো ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর । কিন্ত তাদের স্নাতকোত্তরের ফলাফল প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি । তারপরও কিভাবে তিনি আবেদন করতে পারলেন? কীভাবে তার আবেদনপত্র নিয়োগ বোর্ডে গেলো? 


ফলাফল পাওয়ার আগে আবেদন করারও কোনো সুযোগ নেই। তাকে যদি সুপারিশ করা হয় ও সর্বশেষে নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে সেটা বিভাগের ও জাতির জন্য অকল্যাণকর হবে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক এলাহী।  

অভিযোগের বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুসারে ইতিহাস বিভাগের সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষা করে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। তবে বিভাগকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য কিছু ব্যাক্তি এমন মিথ্যাচার করছে।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে একাধিকবার ফোনকল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৩
এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।