রাজশাহী: স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় চোখে আঘাত পাওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তিন শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ঘটনার দিন পুলিশের ছররা গুলিতে তারা চোখে আঘাত পান।
বর্তমানে ভারত যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওই তিন আহত শিক্ষার্থী। আর এই তিন শিক্ষার্থীর চিকিৎসার পরবর্তী সব খরচ দেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আহত ওই তিন শিক্ষার্থী হলেন- রাবি আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন ইসলাম, ফারসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেসবাহুল ও মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আলিমুল ইসলাম।
পুলিশের ছররা গুলিতে আহত ছয় শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজনের ‘ভিট্রিয়ল রেটিনাল ইনজুরির’ কারণে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৪ মার্চ তাদের ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। তবে দেশের বাইরে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে গত বুধবার (২২ মার্চ) সেখান থেকে তাদের ফেরত পাঠিয়েছেন চিকিৎসকরা। আল আমিন ও মেসবাহুল রাজশাহীতে ফিরেছেন। আলিমুল ঢাকায় পাসপোর্টের কাজ সেরে খুলনায় নিজ বাড়িতে গেছেন।
আইন বিভাগের আল আমিন ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের দিন আমরা বুঝতে পারিনি গুলি করা হবে। আকস্মিক আমাদের ওপর হামলা করা হয়। হামলার পর আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিলেট রয়েছে। গলার নিচে প্রায় ২০-৩০টা পিলেট রয়েছে। ঢাকায় আমাদের তেমন কোনো চিকিৎসা করা হয়নি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করা পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে কেবল পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেই খরচ বহন করতে চেয়েছে।
ফারসি বিভাগের শিক্ষার্থী মেসবাহুল বলেন, ঢাকায় যাওয়ার পর নতুন কোনো চিকিৎসা হয়নি, যা হওয়ার রাজশাহীতেই হয়েছে। চোখে এখনো গুলির ‘পিলেট’ আছে। ডান চোখে কিছুই দেখতে পারছেন না। চিকিৎসক বলেছেন, তারা কোনো ঝুঁকি নিতে চান না, অস্ত্রোপচার করাতে হবে। সে জন্য ভারত গিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন।
তবে রাবি মার্কেটিং বিভাগের আলিমুল ইসলাম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ বহনের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না, যোগাযোগও করেননি। বর্তমানে তিনি খুলনায় তার বাড়িতে রয়েছেন। তার ভারতে চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট তৈরি করা হয়ে গেছে। তিনি শিগগিরই যাচ্ছেন।
রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আল আমিন ও মেসবাহুলের পরিবারের সদস্যরা এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন শিক্ষার্থীর বিদেশে চিকিৎসার খরচ দেবে। সাধ্যের মধ্যে থাকলে শতভাগ খরচই দেওয়া হবে। ভারত যাওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুজনকে পাসপোর্ট করতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শনিবার (১১ মার্চ) বিকেল ৫টা থেকে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। রাত প্রায় সাড়ে ১১টা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, পুলিশ ও সাংবাদিকসহ দুই শতাধিক ব্যাক্তি আহত হন। তাদের মধ্যে ৯০ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গুরুতর তিনজনকে পাঠানো হয় ঢাকায়। পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত ছয় শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেলের চক্ষু বিভাগে ভর্তি করা হয়েছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১২ ও ১৩ মার্চ ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে। এ দুই দিন শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাসহ নানান দাবিতে আন্দোলন করেন। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য তাদের দাবি মেনে নিলে ১৪ মার্চ থেকে আবারও ক্লাস পরীক্ষা শুরু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৩
এসএস/এসএ