ঢাকা, রবিবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

ছাত্রলীগ ইস্যুতে উত্তপ্ত বাকৃবি, আন্দোলনে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৩
ছাত্রলীগ ইস্যুতে উত্তপ্ত বাকৃবি, আন্দোলনে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

ময়মনসিংহ: ছাত্রলীগের নানা অপকর্ম ও অফিসার্স পরিষদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে মদদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এনিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)।

 

আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং চারটি কর্মচারী সংগঠনের সদস্যরা।

এতে প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

রোববার (৯ এপ্রিল) দিনভর এসব ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) কক্ষে অবস্থান নিয়ে অঘোষিত কর্মবিরতি পালন করেছেন কর্মচারী পরিষদের নেতাকর্মী এবং তিন নারী শিক্ষক।

একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মবিরতি পালন করে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে চারটি কর্মচারী সংগঠন। এ সংগঠনগুলো হলো- তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী পরিষদ, চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতি, কারিগরি কর্মচারী পরিষদ এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড।

কারিগরি কর্মচারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুকুল ইসলাম জানান, গত পহেলা এপ্রিল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী আব্দুল্লাহকে মারধর করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদির অনুসারী আকাশ ও তার সঙ্গীরা। এ ঘটনার বিচার দাবিতে টানা কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনে নামে চারটি কর্মচারী সংগঠন। গত ৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বিষয়টি সুরাহা করার জন্য চারটি কর্মচারী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সেখানে অফিসার্স পরিষেদের অবৈধ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তি করায় মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় ৮ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় আলোচনায় বসে কর্মচারীকে মারধরের ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা, আহত কর্মচারীকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া এবং অভিযুক্তকে শাস্তি দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। এ আশ্বাস বাস্তবায়িত না হলে কর্মচারী সংগঠনগুলো কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স পরিষদের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবৈধ মদদ দেওয়ার অভিযোগে দিনভর ভিসি কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা। এতে দিনভর প্রশাসনিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. মামুনুর রশিদ জানান, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গত বছরের ডিসেম্বর মাসে অফিসার্স পরিষদের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী যথা সময়ে নির্বাচন দেওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান কমিটির অবৈধ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন কমিশন গঠন না করে সংগঠনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এতে মদদ দিচ্ছেন উপাচার্য (ভিসি)।  

অফিসার্স পরিষদের সাবেক সভাপতি আরিফ জাহাঙ্গীর জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২ জন কর্মচারীর বেতন থেকে জনপ্রতি ১৮শত টাকা করে কেটে নেওয়া হয়েছে। অথচ লিখিতভাবে বেতন থেকে কোনো ধরনের টাকা না কাটতে ভিসি বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে। এ অবস্থায় আমরা টাকা ফেরত চেয়ে এবং অফিসার্স পরিষদের অবৈধ সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে ভিসি কক্ষে অবস্থান নিই। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।    

অপরদিকে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি ভেটেরিনারি অনুষদের এক নারী শিক্ষিকার কক্ষে ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াদের নেতৃত্বে হামলা ও ভাঙচুর করে এক পরীক্ষার্থীকে মারধর এবং শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করা হয়। এর বিচার চেয়ে ভিসি কক্ষে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন লাঞ্ছিত শিক্ষক প্রফেসর ড. পূর্বা ইসলাম, প্রফেসর ড. আফরিনা মোস্তারিন ও পপি খাতুন।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নির্যাতিত শিক্ষিকা প্রফেসর ড. পূর্বা ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের হামলা ও লাঞ্ছিত করার ঘটনার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো দায়ীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো তারা অভিযোগের মূলবিষয় পাশ কাটিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নামে অভিযুক্তদের মদদ দিচ্ছেন। এ অবস্থায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।  

এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বক্ষেত্রে বিচারহীনতার সংস্কৃতি সৃষ্টি করছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।  

দিনভর আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান তার কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান বলেন, কর্মচারীকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত এ বিষয়টি সামাধান হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে অফিসার্স পরিষদের কাউকে এককভাবে মদদ দেওয়ার কিছু নেই। সংগঠন গঠনতন্ত্র মেনে চলবে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।  

এসময় তিন নারী শিক্ষিকার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি কাজ করছে। আজই তাদের ডেকে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  

তবে এ তদন্তে ঘটনার বিষয়বস্তু পরিবর্তন করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কূটকৌশল করা হচ্ছে বলে খোদ ভিসির সামনেই অভিযোগ করেন নির্যাতিত শিক্ষিকা প্রফেসর ড. পূর্বা ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।