ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালামের কণ্ঠসদৃশ ১২ ও ১৩তম অডিও ফাঁসের দুইদিন পর মঙ্গলবার (১৩ জুন) বের হয়েছে ১৪তম অডিও।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাতে 'দরবেশ সালাম' নামের এক ফেসবুক আইডি থেকে ২ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের একটি অডিও ভাইরাল হয়।
নিয়োগ সংক্রান্ত উপাচার্যের কণ্ঠসদৃশ অডিও একের পর এক ফাঁস হলেও আমলে নেন না বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম। অডিও ফাঁসের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, 'আমি এসব আমলে নেই না। এগুলো আমার রুচিতে বাঁধে। যারা এসব করছে আল্লাহ তাদের ইমান দিন৷ আমিন
এসব অডিও ফাঁসের ঘটনা আমলে না নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়োগের কার্যক্রম। মঙ্গলবার (১৩) জুন অডিও ফাঁসের পরও বুধবার (১৪ জুন) ১ জন চিকিৎসক পদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে ৯, ১০ ও ১১ জুন নিয়োগ সংক্রান্ত তিনটি অডিও ফাঁস হয়। অডিও ফাঁসের রেশ না কাটতেই সোম (১২ জুন) ও মঙ্গলবার (১৩ জুন) চারটি প্রশাসনিক পদের নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, সোমবার (১২ জুন) উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিনটি পদের বিপরীতে ১৩২ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও একজন সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) পদের বিপরীতে ৩৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) প্লাম্বার পদের ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিনটি পদের বিপরীতে সাতজন চাকরিপ্রত্যাশী অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও এক জন ইলেকট্রিশিয়ান পদের বিপরীতে অংশগ্রহণ করেন দশজন চাকরিপ্রত্যাশী।
উপাচার্যের একের পর এক অডিও ফাঁসের ঘটনায় বিব্রত বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন মহল। অডিও ফাঁসের পরও নিয়োগ বোর্ড করার বিষয়টি নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন মহলে।
বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, এসব অডিও ফাঁসের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে চিঠি পাঠিয়েছি। আমরা শিক্ষক হিসেবে তো কিছু করতে পারি না। সর্বোচ্চ তাকে বা সরকারকে অবহিত করতে পারি।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত উপাচার্যের কণ্ঠসদৃশ ১৪টি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এসব অডিওতে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে নেতিবাচক কথা বলতে শোনা যায়।
১১ জুন 'দরবেশ সালাম' নামের ফেসবুক আইডি থেকে ফাঁস হওয়া অডিওতে উপাচার্যকে জুবায়ের নামের একজন চাকরিপ্রার্থীর বিষয়ে কারো সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়। ওই চাকরিপ্রার্থীকে আবেদন করার পর উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে বলেন বলে শোনা যায়।
আর ১০ জুন 'রক সালাম' নামের আইডি থেকে ফাঁস হওয়া দুইটি অডিওতে উপাচার্যকে মেডিকেলে নিয়োগের বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায়।
এর আগে, ৯ জুন একই আইডি থেকে ফাঁস হওয়া অডিওতে উপাচার্য ফাইন আর্টস ও মার্কেটিং বিভাগের নিয়োগের বিষয়ে কথা বলেন। অডিওতে অন্য প্রান্তের ব্যক্তিকে উপাচার্য বলেন, সোজা কথা, আমি আপনার ক্লিয়ারেন্স ছাড়া কাউকে নিয়োগ দেব না।
এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে কয়েক মাসে পৃথক তিনটি ফেসবুক আইডিতে অন্তত ১০টি অডিও ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিপ্রত্যাশীরা আন্দোলন ও ভিসির কার্যালয়ে তালা, ভিসির একান্ত সচিবকে অব্যাহতি এবং শিক্ষক সমিতি ও শাপলা ফোরাম সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা ও তদন্ত করে ব্যবস্থার দাবি করেন।
এমনকি গত ২০ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের কণ্ঠসদৃশ অডিওগুলো প্রশাসনের ভবনের সামনের মাইকে উচ্চস্বরে বাজানো হয়। সেদিন অডিও ফাঁসের ঘটনায় ডিভাইসের খোঁজে উপাচার্যের কার্যালয় ও বাসভবনে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়।
পরবর্তীতে ১২ মার্চ অডিও ফাঁসের নেপথ্যের মানুষদের চিহ্নিত করতে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে যথাশীঘ্র প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। তবে এখন পর্যন্ত ওই কমিটির কোনো মিটিং হয়নি বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য ও শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান।
এ বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে এখনো সেভাবে কাজ শুরু করতে পারিনি। খুব তাড়াতাড়ি শুরু করবো।
এদিকে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে দাবি করে পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষক সমিতি ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরাম। এছাড়াও এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে চিঠি দেন শিক্ষক সমিতি ও শাপলা ফোরাম। তবুও এ ঘটনার দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩
আরএ