ঢাকা, শনিবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

‘সিক বেড বাণিজ্য’, পরীক্ষার সময় শেষ হয়েও যেন হয় না শেষ!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৩
‘সিক বেড বাণিজ্য’, পরীক্ষার সময় শেষ হয়েও যেন হয় না শেষ!

বাগেরহাট: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা চলাকালে বাগেরহাটের একটি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের অসদুপায় অবলম্বন ও সিক বেড বাণিজ্যের মাধ্যমে কিছু শিক্ষার্থীকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।  

এ ঘটনায় বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাফিজ আল আসাদসহ একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোমবার (১৯ জুন) ওই কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, সোমবার (১৯ জুন) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা চলছিল। ওই পরীক্ষায় বাগেরহাটের খানজাহান আলী ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের ২১৩ নম্বর কক্ষে অসুস্থ না হয়েও কিছু শিক্ষার্থী ‘সিক বেডে’ পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। এমন অভিযোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে পরিদর্শনে যান। তখন ওই কক্ষে ২৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। এসময় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে সিক বেডের এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। পরে নকল প্রতিরোধে পরীক্ষা চলাকালে পুরো সময়ে সেখানে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু পরীক্ষা শেষে ওই কর্মকর্তা চলে গেলে, সিক বেডের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে লেখার জন্য অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়।

এমন খবরে একজন সংবাদকর্মী সেখানে গিয়ে ওই অনিয়মের ভিডিও ধারণ করেন। তখন কয়েকজন শিক্ষক-পরীক্ষার্থী ওই সংবাদকর্মীকে আটকে ভিডিও মুছে ফেলতে চাপ দেন। এরই মধ্যে ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে জড়ো হন পরীক্ষার্থীদের শতাধিক শুভানুধ্যায়ী। তারা পিসি কলেজসহ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিটের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ।  

সূত্র বলছে, ওই কেন্দ্রে অতিরিক্ত সময় নিয়ে যারা পরীক্ষা দিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই বিশেষ শিক্ষার্থী। তারা সবাই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তারা শিক্ষকদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিচ্ছিলেন।  

এদিন ওই কেন্দ্রে সরকারি পিসি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অ্যাকাউন্টিং থিওরি, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ইন্ট্রোডাকশন টু বিজিনেস ও গণিত বিভাগের থিওরি অব নাম্বারস বিষয়ের পরীক্ষা চলছিল।
 
সোমবার দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পরীক্ষা চলার কথা থাকলেও, নির্ধারিত সময়ের পরও কিছু পরীক্ষার্থী বই খুলে ও চিরকুট দেখে লিখছেন এমন একটি ভিডিও ফাঁস হয়েছে। এতে দেখা যায়, সে সময় ওই কক্ষে প্রায় ২০ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। যাদের সবাই বই, বিভিন্ন চিরকুট ও মোবাইল ফোনে ধারণ করা ছবি দেখে পরীক্ষার খাতায় লিখছিলেন।
 
জানতে চাইলে, খানজাহান আলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ খোন্দকার আছিফ উদ্দিন রাখি বলেন, পরীক্ষা শেষে নিজ কক্ষে আমি টপশিট স্বাক্ষর করছিলাম। একটি কক্ষের কিছু শিক্ষার্থী তখনও খাতা জমা দেয়নি বলে জানতে পারি। সঙ্গে সঙ্গে আমি খাতাগুলো জমা নেওয়ার নির্দেশ দিই। ওই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে কলেজের সামনে একদল যুবক অবস্থান নিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপে তারা চলে যায়।  

এ ঘটনায় কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মোশারেফ হোসেন ও অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক হেমায়েত হোসেনকে নিয়ে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে, যোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, সেখানে সিক বেডে পরীক্ষায় নকল হচ্ছিল বলে শুনছিলাম। তাৎক্ষণিকভাবে দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়।  একজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারও করেন তারা। পরীক্ষা শেষ হওয়া এবং খাতা জমা নেওয়ার পরে ম্যাজিস্ট্রেট চলে আসেন। পরে আবার শুনতে পাই, ওখানে আবার উত্তরপত্র সরবরাহ করা হয়েছে এবং নির্ধারিত সময়ের পরও পরীক্ষার খাতায় লিখেছে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হাফিজ আল আসাদ ও নেজারত ডেপুটি কালেক্টরেট (এনডিসি) মোহাম্মাদ মোজাহারুল হককে পাঠানো হয়। তারা সেখানে সবার সাক্ষ্য প্রমাণ ও বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আসছেন। তারা আগামীকাল (মঙ্গলবার) এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেবেন। প্রতিবেদন পেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হবে।

একাধিক সূত্র বলছে, এসএসসি, এইচএসসি থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পাবলিক পরীক্ষাতেই বিশেষ শিক্ষার্থীদের জন্য নকলসহ বিশেষ ব্যবস্থা থাকে সব পরীক্ষা কেন্দ্রে। শিক্ষকরাও অনেক ক্ষেত্রে অনৈতিক সুবিধা পেয়ে অথবা বাধ্য হয়ে তাদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকেন।  

এর আগে বাগেরহাট সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে সিক বেড বাণিজ্যের বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই ঘটনায় একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।     

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।