ঢাকা : প্রস্তাবিত ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাখাতের চিত্র হতাশাজনক। শিক্ষাখাতে এ বছর বরাদ্দ বেড়েছে।
অর্থমন্ত্রী গত বাজেটে যেসব কথা দিয়েছিলেন, সেগুলোও প্রতিফলিত হয়নি এ বাজেটে।
বিশেষ করে শিক্ষকদের মান্থলি পেমেন্ট ওর্ডার (এমপিও), বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণসহ আরো বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আগ্রহ ছিল শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের।
অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্যে মোট বরাদ্দ ২১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্যে বরাদ্দ ৯ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্যে বরাদ্দ ১১ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা।
গত ২০১১-১২ অর্থবছরে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে মোট ১৯ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব ছিল। এ বছর প্রস্তাবিত বরাদ্দ গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা বেশি।
বরাদ্দ বাড়লেও কোনো নতুন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা হয়নি প্রস্তাবিত বাজেটে। ২০১১-১২ অর্থবছরে যেসব প্রকল্পের উল্লেখ করা হয়েছিল, সেগুলোর বর্তমান অবস্থাও উল্লেখ করেননি অর্থমন্ত্রী।
গত ২০১১-১২ অর্থবছরে আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছিলেন, ‘বেশ কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ২০০৯-১০ অর্থবছরে একটি স্বচ্ছ নীতিমালার ভিত্তিতে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ডে উন্নীত আরো প্রায় ১ হাজার স্কুল ও মাদ্রাসাকে আগামী অর্থবছরে এমপিওভুক্ত করা হবে। ’
কিন্তু অর্থমন্ত্রী এ অর্থবছরে সে কথা রাখেননি। এমপিওভুক্তির কোনো কথাই উল্লেখ করেননি অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ ও গুণগত উৎকর্ষ সাধনের জন্যে দেশব্যাপী সৃজনশীল প্রতিভা অন্বেষন নীতিমালা’ ২০১২ চূড়ান্ত করা হয়েছে, উল্লেখ করে আগামী বছর থেকে এ উদ্যোগেরও সফল বাস্তবায়ন শুরু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।
এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী গতবারের বাজেটে বলেছিলেন, আমরা আগামী বছরে দেশব্যাপী সৃজনশীল প্রতিভা অন্বেষণের একটি বিশেষ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। এ কার্যক্রমের আওতায় ভাষা ও সাহিত্য, গণিত, বিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিষয়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রতিভা অন্বেষণ করা হবে।
২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় একটি ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠনের যে উদ্যোগের কথা বলেছেন, ২০১১-১২ অর্থবছরেও এই ফাউন্ডেশন গঠনের কথা বলেছিলেন তিনি।
বাজেটে উচ্চ শিক্ষা সর্ম্পকে বরিশাল, গোপালগঞ্জ ও রাঙামাটিতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের যে কাজ শুরু করার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী, তাও গত ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেটের পুনরাবৃত্তি। এছাড়াও রংপুর ও পাবনায় স্থাপিত দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাও গত বছরের।
২০১১-১২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী ৩ হাজার বেসরকারি স্কুলের একাডেমিক ভবন নির্মাণ, মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের জন্য ৩০টি মডেল মাদ্রাসা গড়ে তোলা ও ৩১টি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করার উদ্যোগ, ১ হাজার মাদ্রাসায় ভবন নির্মাণের কথা বললেও ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ উদ্যোগগুলোর বর্তমান অবস্থা উল্লেখ করেননি।
শিক্ষা খাতে গত অর্থবছরে উল্লেখিত আরো যেসব বিষয়ের কথা অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেননি, তার মধ্যে রয়েছে, শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার। এছাড়াও প্রতি উপজেলায় পর্যায়ক্রমে একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপন, বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় ১ হাজার ৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, সিডরসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ও হাওর/বাঁওড় এলাকা এবং দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমের বর্তমান অবস্থা উল্লেখ করেননি।
বাংলাদেশ সময় : ২০৪১ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১২
এমএন/ সম্পাদনা : অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর