জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শ্রেণিকক্ষ সংকটে বিপাকে শিক্ষার্থীরা। শ্রেণিকক্ষের অভাবে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না বিভাগটিতে।
শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে ছয়টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। আর এ ছয় ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিপরীতে শ্রেণিকক্ষ মাত্র দু’টি। বিভাগে একটি সেমিনার লাইব্রেরি থাকলেও শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকায় অধিকাংশ সময় ক্লাস ও পরীক্ষার জন্য তা ব্যবহার করা যায় না।
২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসনের জন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে ২১ ডিসেম্বর তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির নিজে গিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শ্রেণিকক্ষ সংকটের অস্থায়ী সমাধান করে দিয়ে আসেন। তিনি তখন মাইক্রোবায়োলজি এবং পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সঙ্গে একটি শ্রেণিকক্ষ ভাগাভাগি করে ক্লাস নিতে বলেন। সেই সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে স্থায়ী সমাধানের জন্য ভবন নির্মানের প্রতিশ্রুতি দেন।
কিন্তু তিন মাসের মধ্যে স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় বিভাগের শিক্ষার্থীরা মাইক্রোবায়োলজি এবং পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের শ্রেণিকক্ষ ভাগাভাগি করে ক্লাস করা অব্যাহত রাখে।
গত ১৩ জুন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের একটি কক্ষে ক্লাস করতে গেলে শ্রেণিকক্ষ ব্যবহারকে কেন্দ্র করে সেখানে কর্মরত জীব বিজ্ঞান অনুষদের উর্ধ্বতন সহকারী এহতেশামুল হক মিনুর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় বিভাগের শিক্ষকদের ইন্ধনে তাকে শিক্ষার্থীরা মারধর করে বলে অভিযোগ করে মিনু।
পরে এই ঘটনার বিচারের দাবিতে কর্মচারীরা আন্দোলনে নামলে ১৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জি এম হাসানকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করে। সেই সঙ্গে এ ঘটনা তদন্তের জন্য গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে প্রশাসন।
এদিকে তিন দফা দাবিতে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করছে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হল- শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিকভাবে বহিস্কার নয়, সব পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে একটি টেকসই সমাধান; বিভাগের কক্ষ (শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, সেমিনার) সমস্যার দ্রুত স্থায়ী সমাধান; অন্য কোনো বিভাগের সঙ্গে ক্লাস ভাগাভাগি করার সাময়িক ব্যবস্থা না করা।
বিগত দিনগুলোতে তাকালে দেখা যায়, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির গত তিন বছরে ২টি অনুষদ, ২টি ইনস্টিটিউট ও ৯টি বিভাগ চালু করেছেন। কিন্তু তিনি বিভাগগুলোকে অবকাঠামোগত সুবিধা দিতে পারেননি। অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন হলেও সেগুলো ছিল আবাসিক ও প্রশাসনিক।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সৌমিত্র জয়দ্বীপ বাংলানিউজকে বলেন, “শ্রেণিকক্ষ সংকট পূর্বেই ছিল। সেটা দূর না করে কৃতিত্ব নিতে গিয়ে ভূতপূর্ব উপাচার্য অবিবেচকের মতো আরও অনেক বিভাগ খোলায় এ অবস্থা হয়েছে। ফলে শ্রেণিকক্ষ সংকট আরও অনিবার্য হয়ে পড়েছে। সংকটবহুল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তা সমাধান না করলে আন্দোলন করেই দাবি আদায় করা হবে। ”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “শ্রেণিকক্ষ দেওয়ার ব্যাপারে এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। উপাচার্য পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের ক্লাস-পরীক্ষা সচল রাখার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া পরিবেশ বিজ্ঞানের কর্মচারী মারধরের যে অভিযোগ আছে সেটিরও তদন্ত চলছে। ”
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১২
সম্পাদনা: ওবায়দুল্লাহ সনি, নিউজরুম এডিটর