জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোর করে বায়োডাটা সংগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনার পর আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
এদিকে, বায়োডাটা দেখে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পরবর্তী কমিটি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা।
জাবি ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ জাবি শাখার কার্যক্রম স্থগিত করে।
এরপর প্রায় দু’বছর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের তেমন কোনো কার্যক্রম না থাকলেও ৪ জুন সোমবার বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় নেতারা জাবির দু’গ্রুপের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় নেতারা ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থানকারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের শিক্ষাজীবন শেষ করতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার জন্য বলেন। তবে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না করার নির্দেশ দেন তারা। সেই সঙ্গে জাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটির জন্য নেতাকর্মীদের বায়োডাটা জমা দিতে বলেন।
এর পর পরই ক্যাম্পাসে অবস্থানরত বিভিন্ন হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা নিজেদের কর্মী বেশি দেখানোর জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বায়োডাটা সংগ্রহ করে।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের কর্মীর সংখ্যা বেশি দেখানোর জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোর করে বায়োডাটা জমা নিচ্ছে বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীরা। এমনকি হলের ৪০ ও ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বায়োডাটা জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয় বলে অভিযোগ করেন কয়েক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, নিজেদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছাত্রলীগের কমিটিতে নাম চলে আসা এবং রাজনীতি করতে বাধ্য করা হতে পারে বলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে।
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীরা বাংলানিউজকে জানান, ছাত্রলীগের কমিটি বা কোনো তালিকায় নাম থাকলে পরবর্তীতে যদি ছাত্রদল ক্ষমতায় আসে তখন তাদের ওপর নির্যাতন করা হতে পারে। এমনকি ক্যাম্পাস থেকেও বের হয়ে যেতে হতে পারে।
সার্বিক অবস্থা বিবেচনা এবং যারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তাদের তালিকা প্রকাশ করার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের অনুরোধ জানান এসব শিক্ষার্থী।
এদিকে, জোর করে বায়োডাটা জমা নেওয়ার বিষয়ে শহীদ রফিক জব্বার হলের ছাত্রলীগ কর্মী মিঠুন কুণ্ডু বাংলানিউজকে বলেন, “কারো কাছ থেকে জোর করে বায়োডাটা নেওয়া হয়নি। অন্যান্য হলে গড়পত্তা বায়োডাটা জমা নেওয়া হলেও, আমার হলে তা হয়নি। যারা ছাত্রলীগ করে বা করবে তাদের বায়োডাটা জমা দেওয়া হয়েছে। ” শহীদ রফিক জব্বার হল থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জনের বায়োডাটা জমা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
মওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগ নেতা মাহতাব মেহেদী সম্রাট বাংলানিউজকে বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ”
গত ১২ জুন জাবিতে বায়োডাটা জমা নিতে এসে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান জীবন বাংলানিউজকে বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব জাবিতে কমিটি দেওয়া হবে। আগামী মাস রমজান ও পরের মাস শোকের হওয়ায় এ মাসেই কমিটি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ”
তিনি বলেন, “জেলা কমিটি যতো সদস্য বিশিষ্ট হয়, জাবি শাখার কমিটিও ততো সদস্য বিশিষ্টই হবে। ”
বায়োডাটা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “যারা ছাত্রলীগ করে তাদের বায়োডাটা নেওয়া হয়েছে। তাদের বিষয়ে পারিবারিকভাবেও খোঁজ নেওয়া হবে। ”
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের গ্রুপিং ও কোরামের বিষয়ে তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের রাজনীতিতে কোনো বেল্ট বা কোরাম নেই। সবাই ছাত্রলীগ করে, সবাই একটি গ্রুপ। বাইরের গ্রুপ বা ভেতরের গ্রুপ বলে কোনো কথা নেই। ”
এদিকে দীর্ঘ প্রায় দু’বছর ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা জাবি ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম শাফিন ও সাধারণ সম্পাদক নির্ঝর আলম সাম্য, সহ-সভাপতি রাশেদ রেজা ডিকেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসাইন রেজা, সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য সামিউল বাসির সামিসহ ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা তাদের গ্রুপের অন্যান্য নেতাকর্মীরা ৬ জুন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশের পরপরই নতুন কমিটির গুনঞ্জন শুরু হয়।
জাবি ছাত্রলীগ শাখার সহ-সভাপতি রাশেদ রেজা ডিকেন বাংলানিউজকে বলেন, “ছাত্রলীগ কেউ জোরপূর্বক করে না নিজের ইচ্ছায় করে। ছাত্রলীগে ছাত্রদল অনুপ্রবেশ করানোর জন্য জোরপূর্বক বায়োডাটা জমা নেওয়া হতে পারে। এ বিষয়ে ভালোভাবে তদন্ত করে দেখার জন্য আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে অনুরোধ করছি। ”
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১২
সম্পাদনা: ওবায়দুল্লাহ সনি, নিউজরুম এডিটর