ঢাকা: অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় প্রলয় গ্যাংয়ের ১৪ সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় চারজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
সোমবার (২০ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিন বোর্ডের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থী শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ এবং মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের তবারক মিয়াকে দুই বছর, একই হলের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের গোলাম ইসরাফ আরিফ সাহিলকে এক বছর ও ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সৈয়দ নাসিফ ইমতিয়াজকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের ফয়সাল আহমেদ সাকিবকে এক বছর, মার্কেটিং বিভাগের মো. শফিউল ইসলাম শোভনকে এক বছর, মাস্টারদা সূর্য সেন হলের এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মো. ফারহান লাবিবকে এক বছর, দর্শন বিভাগ এবং হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সাদনিম খান অর্ণবকে এক বছর, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ও কবি জসীম উদ্দীন হলের মো. নাইমুর দুর্জয় ও একই হলের এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাদ ইব্রাহিমকে ছয় মাস, ফিন্যান্স বিভাগের মোশারফ হোসাইনকে এক বছর, রহমান জিয়া ও সাকিব ফেরদৌসকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের হেদায়েতুন নূর রিশানকে এক বছর, একই হলের এবং তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের মো. সাদমান তৌহিদকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের তবারক মিয়া, অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের মুরসালিন ফাইয়াজ ও ফয়সাল আহমেদ সাকিব এবং অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের জুবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
তাদের কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না মর্মে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিন বোর্ডের এক সদস্য জানান, গত মার্চ মাসে আলোচনায় আসার পর প্রলয় গ্যাংকে নিয়ে আন্তঃহল একটি তদন্ত করা হয়। সেই তদন্ত রিপোর্টকে বিবেচনায় নিয়ে ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার ঘটনায় চারজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি জানান, কয়েকদিন আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মীর আলভি আরসালানকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তন চত্বরে প্রলয় গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্য মারধর করেন। এ ঘটনায় আলভির মা শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তা থেকে চারজনকে প্রক্টরিয়াল টিম শনাক্ত করতে পেরেছে। এদিকে আন্তঃহল তদন্ত প্রতিবেদনেও এ চারজনের মধ্যে তিনজনের নাম পাওয়া গেছে। মামলায় আরও একজনের নাম উল্লেখ থাকলেও তথ্য ভুল থাকায় তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২০২১ সেশনের কয়েকজন শিক্ষার্থী ‘প্রলয় গ্যাং’ নামে একটি অপরাধী চক্র গড়ে তোলেন। যাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় ছিনতাই, মারধর, কক্ষদখলসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দীন হল মাঠে জুবায়ের ইবনে হুমায়ুন নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের পর প্রলয় গ্যাংয়ের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আলোচনায় আসে। দীর্ঘদিন পর আলভিকে মারধরের ঘটনায় আবারও আলোচনায় আসে প্রলয় গ্যাং।
এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গত রোববার (১৯ নভেম্বর) মামলায় প্রধান আসামি তবারক মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৩
আরআইএস