ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে শিক্ষকদের নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন ছাত্র ও শিক্ষকরা।
অনুষদের অডিটোরিয়ামে বার্ষিক চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে এক ছাত্রলীগ নেতা বক্তব্য দিয়ে শিক্ষকদের অনিয়মের বিচার চাইলে উত্তেজনার শুরু হয়।
এদিকে, ঘটনার পর মঙ্গলবার বিকেলে ছাত্রলীগ নেতা নবেন্দু সাহা নবর আচরণের বিচার চেয়েছেন অনুষদের ২৫ জন শিক্ষক। তার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষকরা অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন এবং বিচার চেয়ে উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে শিক্ষকদের অনুষ্ঠান বয়কটের পর শিল্পাচার্য জয়নুল পদক দেওয়া সম্ভব হয়নি।
সূত্র জানায়, চারুকলার অডিটোরিয়ামে অনুষদের বার্ষিক চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পোদক এবং চারুকলার মৃৎশিল্প বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র নবেন্দু সাহা নব।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, চারুকলার বিভিন্ন শিক্ষক ছাত্রদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছাচারী আচরণ করে আসছেন। এ অনুষ্ঠান ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এটি এখন আয়োজন করা হয়েছে। গত বছর এটি আয়োজন করলে যারা অংশগ্রহণ করতে পারতেন, তাদের এখন অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হচ্ছেনা।
তিনি আরো বলেন, এ প্রদর্শনীর কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। শিক্ষকরা যা ইচ্ছা করেন, তাই হয়। একেক বিভাগের জন্য একেক নিয়ম রয়েছে। এছাড়া ছাত্ররা এক মিনিট দেরি করে ক্লাসে এলে তাদের হাজিরা দেওয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে অনেক সময় কিছু শিক্ষক ক্লাসেই আসেন না। এলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছাত্রদের বসিয়ে রেখে তারপর ক্লাস নেন। এসব অনিয়মের বিচার করতে হবে।
এ সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তার বক্তব্যেকে স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ‘‘নব যেসব দাবি জানিয়েছেন সেগুলো আমাদের প্রাণের দাবি। এতো দিন শিক্ষার্থীদের মুখ বন্ধ রাখা হয়েছিল। আমরা তার পাশে আছি। ’’
এ ঘটনার পর শিক্ষকরা অনুষ্ঠান থেকে ওয়াকআউট করেন। পরে অনুষদের ডিন কার্যালয়ে শিক্ষকদের বৈঠক শেষে ২৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ উপাচার্যকে দেওয়া হয়।
এ ছাত্রলীগ নেতার বক্তব্যের সময় সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সহিদ আকতার হুসাইন, অনুষদের ডিন অধ্যাপক এমদাদুল হক মো. মতলুব আলী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী শহীদ কবির ও অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারক আলভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নবেন্দু সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘আমি শুধু বার্ষিক প্রদর্শনীর নীতিমালা ও জয়নুল পদকের নীতিমালার বিষয়ে জানতে চেয়েছি। কিন্তু শিক্ষকদের কাছে কোনো উত্তর না থাকায় তারা অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন। ’’
শিক্ষকদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি যা সত্য তাই বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আমার কোনো দোষ খুঁজে পান, তাহলে যে শাস্তি প্রদান করবেন তাতে আমি রাজি আছি। তবে চারুকলার সকল শিক্ষার্থী আমার সঙ্গে আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর এবং ছাত্র রাজনীতির সময়কালে আমি কোনো দিন এতো অভিনন্দন পাইনি। ছাত্রদের পক্ষ নিতে গিয়ে যদি শাস্তি পাই, তাহলে দু:খ নেই। ’’
চারুকলা শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা নিদিষ্ট ফোরামে বলতে হবে। একটি বার্ষিক অনুষ্ঠানে একজন ছাত্র কিভাবে শিক্ষকদের বিচার চাইতে পারেন? যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পীরা এবং শিক্ষার্থীদের অভিভাবকসহ অনেক অতিথি উপস্থিত ছিলেন। আমরা এ ঘটনার তদন্ত ও বিচার চেয়ে উপাচার্যের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। ’’
এদিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে অধ্যাপক সহিদ আকতার জয়নুল গ্যালারিতে শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত প্রদর্শনী দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১২
এমএইচ/সম্পাদনা: আবু হাসান শাহীন, নিউজরুম এডিটর ও অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর