ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে মাদকের ‘হটজোন’ বানিয়েছিলেন মামুন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে মাদকের ‘হটজোন’ বানিয়েছিলেন মামুন গ্রেপ্তার মামুন ও মুরাদ

ঢাকা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়মিত যাতায়াত ছিল নারীকে গণধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন (৪৪)।  

মাদককারবারি মামুন নিয়মিত কক্সবাজার থেকে দুই থেকে আড়াই হাজার পিস ইয়াবা এনে বিক্রি করতেন জাবি ক্যাম্পাসে।

মামুনের ইয়াবার বিক্রির ‘হটজোন’ ছিল জাবি ক্যাম্পাস বটতলা।  

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

এর আগে, রাতে মামুনুর রশিদ ওরফে মামুনকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে এবং ধর্ষণ ঘটনার অন্যতম সহায়তাকারী মো. মুরাদকে (২২) নওগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

হোতা মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে র‌্যাব জানিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে জাবি ক্যাম্পাসের সিনিয়র প্রভাবশালী শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে মাদক কারবার চালাতেন মামুন। হরহামেশাই ক্যাম্পাসে নারী নিপীড়ন ধর্ষণসহ শ্লীলতাহানির ঘটনায় জড়িত তিনি।  

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে।  

পরবর্তীতে ঘটনার দিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ৪ জনকে আটক করে। ওই ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী বাদী হয়ে ঢাকার আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি গণধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।

চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব।  

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব-৪, র‌্যাব-২ এবং র‌্যাব-৫ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন (৪৪) ও নওগাঁ সদর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অন্যতম আসামি মো. মুরাদ (২২)কে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা গণধর্ষণে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।  

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার মামুন প্রায় ৬/৭ বছর যাবত মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মামুন কক্সবাজারের টেকনাফ হতে প্রতি মাসে কয়েক দফায় প্রায় ৭/৮ হাজার ইয়াবা সংগ্রহ করে তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় বিক্রি করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু মাদকসেবী শিক্ষার্থীকে ইয়াবা সরবরাহ করতেন তিনি।

এছাড়াও গ্রেপ্তার মামুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাদক বিক্রির সুবাদে মামলার ১নং আসামি মোস্তাফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র ছাত্রদের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয় এবং মাঝে মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে মাদকসহ রাত্রিযাপন করতেন এবং অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গে মাদক সেবন করতেন বলে জানায়।  

তিনি বলেন, মামুন জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, গ্রেপ্তার মামুনের সঙ্গে ভুক্তভোগীর স্বামীর একই এলাকায় বসবাসের কারণে বিগত ৩/৪ বছর পূর্বে তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে মামুন মাঝেমধ্যে ভুক্তভোগীর স্বামীর মাধ্যমেও বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় মাদক সরবরাহ করতেন বলে দাবি মামুনের।

কমান্ডার মঈন বলেন, বেশিদিন একস্থানে থাকতেন না মামুন। মাদক কারবারের কারণে কিছুদিন পূর্বে গ্রেপ্তার হওয়ায় তার থাকার জায়গার সমস্যা সৃষ্টি হয়। তখন তিনি ভুক্তভোগীর স্বামীকে ফোন দিয়ে কিছুদিনের জন্য তাদের বাসায় অবস্থান করবে বলে জানায়। গ্রেপ্তার মামুন ভুক্তভোগীর ভাড়া বাসায় সাবলেট হিসেবে প্রায় ৩/৪ মাস অবস্থান করায় তাদের মধ্যে সখ্য তৈরি হয়।

ঘটনার পূর্বে মামলার ১ নম্বর আসামি মোস্তাফিজুর গ্রেপ্তার মামুনের কাছে অনৈতিক কাজের ইচ্ছা পোষণ করলে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক মামুন গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে ফোন দিয়ে জানায় মোস্তাফিজুর রহমান নামের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তার থাকার ব্যবস্থা করেছেন বিধায় তিনি এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকবেন। তাই মোস্তাফিজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে আসতে বলেন মামুন।

মামুনের কথামতো ওই দিন সন্ধ্যার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে দেখা করে জাহিদ। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর স্বামী জাহিদকে গ্রেপ্তার মামুন তার অন্যতম সহযোগী মোস্তাফিজ, মুরাদ, সাব্বির, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।  

গ্রেপ্তার মামুন কৌশলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে তাদের বাসায় থাকাকালীন তার ব্যবহৃত কাপড় আনতে তার স্ত্রীকে (ভিকটিম) ফোন দিতে বলে। মামুনের কথায় জাহিদ ফোন করলে রাত ৯টার দিকে মামুনের ব্যবহৃত কাপড়সমূহ একটি ব্যাগে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে উপস্থিত হয়।  

ওই সময় পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গ্রেপ্তার মামুন ও মামলার ১নং আসামি মোস্তাফিজ কৌশলে গ্রেপ্তার মুরাদকে ভিকটিমের স্বামী ও গ্রেপ্তারকৃত মামুনের ব্যবহৃত কাপড়ের ব্যাগসহ হলের ৩১৭নং রুমে নিয়ে যেতে বলে। গ্রেপ্তার মুরাদ ভুক্তভোগীর স্বামীকে নিয়ে হলের রুমে অবস্থান করে।  

এসময় গ্রেপ্তার মামুন ও মামলার ১ নম্বর আসামি মোস্তাফিজ ভিকটিমকে কৌশলে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে পর্যায়ক্রমে গণধর্ষণ করে। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসায় চলে যেতে বলে। গ্রেপ্তার মামুন ও মোস্তাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের রুমে গিয়ে স্বামী জাহিদকেও বাসায় চলে যেতে বলে।  

স্বামী ভুক্তভোগী স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা জানতে পেরে থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করে। ঘটনা জানাজানি হলে মামুন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় আত্মগোপন করেন।  

গ্রেপ্তার মুরাদ গণধর্ষণে বিষয়টি ঘটনার সময় না জানলেও থানায় মামলা হওয়ার পর সেও পালিয়ে নওগাঁ এলাকায় আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে উভয়ে আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মামুন প্রায় ২০ বছর পূর্বে ঢাকার জুরাইন এলাকায় এসে গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে চাকরি করেন। পরবর্তীতে তিনি আশুলিয়া এলাকায় এসে গার্মেন্টসের চাকরি পাশাপাশি মাদক ব্যবসায় জড়িত হন।  

পরবর্তীতে তিনি গার্মেন্টসের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১৭ সাল থেকে পুরোপুরি মাদক ব্যবসায় জড়ান। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদক সংক্রান্তে ৮টি মামলা রয়েছে এবং ইতিপূর্বে এসকল মামলায় একাধিক বার কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।  

গ্রেপ্তার মুরাদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকতেন। তার বিরুদ্ধে নওগাঁ থানায় মারামারি সংক্রান্ত ১টি জিডি রয়েছে বলে জানা যায় । ৩১৭ নম্বর কক্ষে তার নামে বরাদ্দ হলেও থাকতেন অন্য রুমে।

মামুন, মুরাদসহ ধর্ষণকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৪
এমএমআই/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।