ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

পঞ্চগড়ে ১০ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন, কী বলছেন স্থানীয়রা 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৪
পঞ্চগড়ে ১০ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন, কী বলছেন স্থানীয়রা 

পঞ্চগড়: বহুল প্রচলিত ও ঐতিহ্য ধরে রাখা দেশের সর্ব উত্তরের ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হয়েছে। আর এতে করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) ও স্থানীয়দের মাঝে বইছে সমালোচনার ঝড়।

 

নতুন হওয়া নামগুলো পরিবর্তনের দাবি উঠলেও শিক্ষা কর্মকর্তা বলছে নতুন এই নাম পরিবর্তনের আর কোনো সুযোগ নেই।

জানা গেছে, নতুন পরিবর্তন হওয়া ওই সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় রয়েছে ৬টি, আটোয়ারী উপজেলায় ৩টি ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় ১ বিদ্যালয়।

গত ৩ এপ্রিল ২৪৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ ও বিদ্যমান নাম পরিবর্তন নীতিমালা ২০২৩ এর নীতি ৪ এর (ক) ও ৫ অনুযায়ী এসব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়।

নাম পরিবর্তন হওয়া বিদ্যালয়গুলো হলো-

(১) তেঁতুলিয়া উপজেলার মাথাফাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে বর্তমান নামকরণ করা হয়েছে মাধবীলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, (২) পেদিয়াগছ আব্দুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে নতুন নাম রজনীগন্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, (৩) বোদা ময়নাগুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে নতুন নাম দোলনচাঁপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৪) ভজনপুর দেবনগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে নতুন নাম হাসনাহেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, (৫) হুলাসুবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে নতুন নাম অপরাজিতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, (৬) মন্ডলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে নতুন নাম মহানন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। (৭) আটোয়ারী উপজেলার ফকিরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে নতুন নাম আটোয়ারী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, (৮) সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে নতুন নাম মির্জাপুর সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, (৯) সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে বর্তমান নতুন নামকরণ করা হয়েছে পূর্ব সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ও (১০) দেবীগঞ্জ উপজেলার পীড়াফাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে নতুন নাম মল্লিকাদহ সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়েছে।

তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ মোকতারুল ইসলাম বলেন, দেবনগড় পঞ্চগড়ের পাঁচ গড়ের অন্যতম গড়। এ নামের নিজস্ব পরিচিতি ও খ্যাতি রয়েছে। বিদ্যালয়টি ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত তখন থেকেই এই নামে পরিচিত হয়ে আসছে। ভজনপুর দেবনগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামটিতে ভজনপুর ও দেবনগড় দুই এলাকার নাম হওয়ায় ভজনপুর শব্দটি বাদ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন দেখছি পুরোটা বাদ দিয়ে নাম দেয়া হয়েছে হাসনাহেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি অদ্ভুত অযৌক্তিক ও বিভ্রান্তিকর। নামটি পরিবর্তন করায় বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হিসেবে আমি ব্যথিত।  

পঞ্চগড়ের শিক্ষাবিদ ও সরকারি মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক হাসনুর রশিদ বাবু বলেন, এই নামগুলো এলাকায় যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে গেছে। এছাড়া এটি স্থানীয় ঐতিহ্য ও ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত তাই এসব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন যুক্তিযুক্ত হয়নি। তাই পূর্বের নামগুলো বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি।

তবে ভিন্ন কথা বললেন তেঁতুলিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।  

তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম শ্রুতিকটু বা নেতিবাচক সেসব প্রতিষ্ঠান রেজুলেশন করেই তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করে। এ বিষয়ে উপজেলায় একটি কমিটি ছিল যার প্রধান ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ওই কমিটিই থেকেই তেঁতুলিয়ার ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্বের নাম বাদ দিয়ে নতুন নামের প্রস্তাব পাঠানো হয়। ফুলের নাম ও নদীর নামে বিদ্যালয়গুলোর নতুন নামকরণ করা হয়েছে। শিশুদের কাছে এই নামগুলো যেমন শ্রুতিমধুর তেমনি সুন্দর। একটি ভালো কাজ হলে সব সময়ই এর বিরোধিতা থাকে। এখন সেটিই হচ্ছে।  

এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুজ জামান বলেন, এই নামগুলো উপজেলা ও জেলা কমিটির মাধ্যমেই পরিবর্তন করে শ্রুতিমধুর নামকরণ করা হয়েছে। এখন এসব নাম পরিবর্তনের আর সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।