ঢাকা: বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের আয়োজনে গত বছরের বই পড়া প্রতিযোগিতায় ঢাকা মহানগর পর্যায়ের বিজয়ী কলেজ শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুক্রবার সম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগরের সেরা ১০টি কলেজ এবং কেন্দ্রভিত্তিক বইপড়া কর্মসূচির মোট ৫৮০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
বিশ্বখ্যাত আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের মানব কল্যাণমুখী সংস্থা সিটি ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও সিটিব্যাংক এনএ’র পরিচালনায় তৃতীয় বারের মতো ‘সিটি আগামীর আলো প্রতিযোগিতা’ শীর্ষক এ কর্মসূচি চলে গত এক বছরজুড়ে।
কলেজ পর্যায়ের বিজয়ী ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ঢাকা মহানগরের বর্ণাঢ্য এ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় চিত্রশালার প্লাজায়।
ঢাকা মহানগরের ১০টি কলেজ ও কেন্দ্রভিত্তিক বইপড়া কর্মসূচিতে মোট ১০৫৩ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের মধ্যে সেরা ১০টি কলেজ এবং কেন্দ্রভিত্তিক বইপড়া কর্মসূচির মোট ৫৮০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে তাদের অভিভাবকের উপস্থিতিতে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
বইপড়া কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা বাংলা সাহিত্য ও পৃথিবীর কিশোর সাহিত্যের সেরা ১২টি বই পড়ার সুযোগ পেয়েছে। একটি ছোট্ট সরস পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের বইপাঠ মূল্যায়ন করে, পঠিত বই-এর উপর ভিত্তি করে ৪টি ধাপে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। মূল্যায়ন পর্বে যারা ৬টি বই পড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে তারা পেয়েছে স্বাগত পুরষ্কার। যারা ৮টি বই পড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে তারা পেয়েছে শুভেচ্ছা পুরস্কার। যারা ১০টি বই পড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে তারা পেয়েছে অভিনন্দন পুরস্কার। যারা ১২টি বই পড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে তারা পেয়েছে বিশ্বসহিত্য কেন্দ্র পুরস্কার।
বর্ণাঢ্য এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, বিকল্পধারার চলচ্চিত্র আন্দোলনের পথিকৃৎ এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহবুব জামিল, শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সিটিব্যাংক এনএ বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিটি কান্ট্রি অফিসার রাশেদ মাকসুদ, নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার বেঞ্জামিন ডি কস্তা, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার এবং বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শরিফ মো. মাসুদ। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কর্মসূচি সমন্বয়কারি মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন।
পুরস্কার গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি জীবনকে উপলব্ধি করার জন্য সৃজনশীল সাহিত্যপাঠ অত্যাবশ্যক। শিক্ষার্থীদের আনন্দে-সৌন্দর্যে-প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা পরিপূর্ণ পৃথিবী গড়ার সুদৃঢ় আহ্বান জানান তিনি।
মাহবুব জামিল বলেন, বই পড়ে মননশীলতার চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। এই সময়ের অন্ধকার ভেদ করে আলোয় উদ্ভাসিত সমাজ গড়তে শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র শিক্ষার্থীদের কাছে আলোকবর্তিকা। সৌভাগ্যবান প্রজন্ম হিসাবে বই পড়া কর্মসূচির সুযোগ পেয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের জীবনকে দীপান্বিত করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন শিক্ষা সচিব।
শিক্ষা সচিব আরো জানান, সরকার নিবিড়ভাবে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও সেটি অব্যাহত থাকবে।
সিটি কান্ট্রি অফিসার রাশেদ মাকসুদ সিটি ব্যাংক এনএ ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে সিটি আগামীর আলো বই পড়া কর্মসূচিকে একটি সফল প্রয়াস হিসেবে উল্লেখ করেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের উদ্যোগ সফলভাবে সম্পন্ন করতে সিটি ব্যাংক এনএ সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, দেশে উচ্চমূল্যবোধ ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন আলোকিত মানুষ গড়ে তোলা এবং তাদের জাতীয় শক্তি হিসেবে সংঘবদ্ধ ও সমুন্নত করা এবং দেশের আপামর মানুষের চিত্তের সার্বিক আলোকায়ন ঘটানোর লক্ষ্যে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র গত ৩৪ বছর ধরে সারা দেশে বই পড়া কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। সিটিব্যাংক এনএ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে গত পাঁচ বছর ধরে আলোকিত মানুষ সৃজনে কাজ করে যাচ্ছে।
২০০৫ সালে প্রথম আলো বন্ধুসভার আয়োজনে ৭০টি সুনির্বাচিত বই পড়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সিটিব্যাংক-বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র বইপড়া কর্মসূচি।
সিটি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় গত বছর দেশের ১৫টি জেলার ৫০টি কলেজের প্রায় ৪ হাজার ছাত্র-ছাত্রী এই বই পড়া কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। সিটি ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় ৩য় সিটি আগামীর আলো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ৫০টি কলেজে কর্মসূচি পরিচালনা এবং পুরস্কারের জন্য বই দেওয়া হয়েছে।
কলেজে সরবরাহ করা বইগুলো কলেজেই থাকবে, যাতে করে পরবর্তী বছরগুলোতেও ছাত্র-ছাত্রীরা ওই বইগুলো পড়ার সুযোগ পেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১২
সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর