ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ দুই উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর তিন দিনের জন্য কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রতিনিধিরা।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাংবাদিক সমিতিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি সুস্মিতা কর এই ঘোষণা দেন।
তিনি জানান, আজ দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের সাথে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সনাতনদের দাবির কয়েকটি দ্রুত সময়ের মধ্যে এবং কয়েকটি দীর্ঘমেয়াদে পূরণ করার আশ্বাস দিয়েছেন অধ্যাপক ড. ইউনূস।
দাবি পূরণে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে সরকারকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এই সময় সারা দেশে ‘সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কোনো কর্মসূচি থাকবে না। তবে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পরিস্থিতি বিবেচনায় পুনরায় কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন সুস্মিতা কর।
এ সময় সনাতনদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা ও দেওয়া আশ্বাস তুলে ধরেন হিন্দু অধিকার আন্দোলনের প্রতিনিধি সুস্মিতা কর, লিংকন দত্ত ও অন্তু রায়।
তারা বলেন, আমাদের প্রথম দাবি ছিল সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া এবং ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়া সংখ্যালঘু আইন প্রণয়নের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়কে দ্রুত নির্দেশ দেওয়া হবে।
‘সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নিয়োগ হওয়ার পর নির্দেশনা দেওয়া হবে। ‘সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড’ আধুনিকায়নের বিষয়ে একই কথা বলা হয়েছে। ’
তারা আরও জানান, আমাদের আরেকটি দাবি ছিল সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৯০ দিনের মধ্যে যেন সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়, সেজন্য অধ্যাদেশ জারি করা হবে বলে জানানো হয়েছে। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করার বিষয়ে খুব দ্রুত আলোচনায় বসার কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন এবং ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ যথাযথ বাস্তবায়ন করার যে দাবি জানিয়েছেন, সেরকম একটি আইন ইতোমধ্যে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আইনটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আন্দোলনকারী এই শিক্ষার্থীরা শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিনের ছুটি চেয়েছেন। তবে ৩ দিনের ছুটি বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে সনাতনদের অন্যান্য প্রধান ধর্মীয় উৎসবের তালিকা করে ছুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
প্রতিনিধি সুস্মিতা কর বলেন, আমাদের আন্দোলনে অনেকেই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কথা বলছেন। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন।
তিনি বলেন, আমাদের অনেক মুসলিম ভাইয়েরা হয়ত মনে করতে পারেন, আমরা আপনাদের মন্দির পাহারা দিচ্ছি, তবুও আপনারা আন্দোলন করছেন কেন। কিন্তু আপনারা কতদিন এভাবে রক্ষা করবেন। আমরা এর একটি স্থায়ী সমাধান চাই।
বাংলাদেশ সময়: ২২২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৪
এএটি