ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

অভিভাবকহীন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৪
অভিভাবকহীন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

খুলনা: ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। একই সঙ্গে পদত্যাগ করেছেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী।

আরও পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি হলের প্রভোস্টরা।  

এছাড়াও পদত্যাগ করেছেন সিন্ডিকেটের দুইজন সদস্য, শারীরিক শিক্ষা চর্চা বিভাগের পরিচালক, আইকিউএসির পরিচালক ও অতিরিক্ত পরিচালকরা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় তাদের পদত্যাগের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে পড়েছে অভিভাবকশূন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো কাগজে স্বাক্ষর করার কেউ নেই।

খুবির সদ্য বিদায়ী উপাচার্য কোটা আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কঠিন অবস্থার মুখেও সাহসের সঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেননি কোনো পুলিশ, হতে দেননি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। ক্যাম্পাসে যাতে পুলিশ না ঢোকে সেজন্য সে কঠিন চাপের মুখেও তিনি ছিলেন অনড়। এ সময় একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যায় উপাচার্য প্রফেসর মাহমুদ হোসেন অফিসে বসার একটি ছবির সঙ্গে নিচে লেখা ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো পুলিশ ঢোকবে না, এখানে আমিই প্রশাসন’। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনোবল আরও চাঙা করে।  

এদিনের পর পুলিশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ খবর শোনার পরপরই উপাচার্য ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দপ্তরকে থানায় পাঠান। নিজে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ( কেএমপি) কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন। ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তরের পরিচালক ও সহকারী পরিচালকদেরকে নির্দেশনা দেন যতক্ষণ শিক্ষার্থীদের থানা থেকে ছেড়ে না দেওয়া হয় ততোক্ষণ সেখানে থাকা। সব মিলিয়ে ভিসির ভূমিকায় সন্তুষ্ট ছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যে কারণে ভিসির পদত্যাগ রোধ করতে রোববার (১৯ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে প্রশাসনিক ভবনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে প্রশাসনিক ভবন ও উপাচার্যের কার্যালয় দখল করে রাখেন। ভিসি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সময় নেন। অবশেষে মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার এ তিনটি পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এ পদে কেউ না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। যে কারণে অবিলম্বে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব পদে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক আয়মান আহাদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের আন্দোলনটাই ছিল দেশ সাম্য-সমতার ভিত্তিতে গঠিত হবে। ভিসি স্যার পলিটিক্যাল ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত তারপরও তিনি পলিটিক্যাল চর্চা কখনো করেননি। তাই আমরা দাবি করেছিলাম ভিসি স্যারকে থেকে যাওয়ার জন্য। তিনি যেন পদত্যাগ না করেন। যেহেতু ভিসি স্যারের সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হয়। আমরা দাবি করেছিলাম অন্যান্যদের বাদ দিতে। তাই তিনি কাজ না করার অপরাগতা প্রকাশ করে পদত্যাগ করেছেন। আমরা স্যারকে এখন যেভাবে শ্রদ্ধা করি সামনেও একইভাবে স্যারকে শ্রদ্ধা করব।  

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই দ্রুত নিয়োগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন আসুক এবং একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হোক। আমরা উন্নত দেশ নই আমাদের রিজার্ভ অতি নগণ্য নতুন ভিসির কাছে আমাদের চাওয়া ক্যাম্পাসে যেন ছাত্র রাজনীতি যেভাবে নিষিদ্ধ ঠিক সেভাবে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ থাকবে। ক্যাম্পাস হবে গবেষণা নির্ভর। আমরা নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আবেদন করেছি যত দ্রুত সম্ভব আমাদের প্রশাসনিক পদগুলো পূরণ করে দেওয়ার। যাতে করে কোনো প্রকার অরাজকতা সৃষ্টি না হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২১ , ২০২৪
এমআরএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।