সংসদ ভবন থেকে: উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়নে একটি ‘উচ্চ শিক্ষা কমিশন’ গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে সংসদকে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
রোববার জাতীয় সংসদের টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তরে মো. ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ এবং সুযোগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উচ্চ শিক্ষা কমিশন গঠনের পরিকল্পনা বর্তমান সরকারের রয়েছে। এ কমিশন গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পেশ করেছেন। প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। ”
মন্ত্রী আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) উচ্চ শিক্ষা কমিশনে রূপান্তর করলে খুব একটা অতিরিক্ত বাজেটের প্রয়োজন হবে না। গত ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মজ্ঞুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি বাজেট জমা দিয়েছেন।
তিনি জানান, এতে ২০১২-১৩ অর্থবছরে বরাদ্দ করা বাজেটের অতিরিক্ত ১০ লাখ ৯২ হাজার ২০০ টাকা প্রয়োজন হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত আছে। এ অবস্থায় উচ্চ শিক্ষা কমিশন প্রতিষ্ঠায় অতিরিক্ত মাত্র এক লাখ ৯ হাজার ২০০ টাকা বরাদ্দ দিতে হবে।
মো: নূরুল ইসলাম সুজনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। ”
তিনি বলেন, “দেশের হাতে গোনা দুই-তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে। কোথাও গণ্ডগোল নেই। ”
মন্ত্রী বলেন, “ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা দাবি-দাওয়ার নামে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছিল। তবে তা সামাল দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। সত্যিকার অর্থে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত, এ কারণে বর্তমানে সেশনজট অনেকাংশে কমেছে। ”
রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে নুরুল ইসলাম বলেন, ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে লেখাপড়া বাদ দিয়ে অহেতুক রাজনীতিতে জড়িয়ে না পড়ে সেজন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বকে খেয়াল রাখতে হবে।
এদিকে তহুরা আলীর প্রশ্নের জবাবে বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য অভিভাবকদের খরচ বেড়ে যাওয়াসহ ছয় কারণে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কমছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ। অন্য কারণগুলো হলো, ভাল বিজ্ঞান শিক্ষকের অভাব, মানসম্মত ল্যাবরেটরি ও সুযোগের অভাব, বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয়, বিজ্ঞান শিক্ষাক্ষেত্রে যথোপযুক্ত চাকরির সুযোগ না থাকা এবং প্রণোদনার অভাব।
তবে বর্তমান সরকার বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী ও বিজ্ঞানমনস্ক করার জন্য একাধিক কার্যক্রম নিয়েছে দাবি করেছেন শিক্ষা মন্ত্রী।
ফরিদুন্নাহার লাইলীর প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা মন্ত্রী জানান, দেশের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো ব্রিটিশ কারিক্যুলাম অনুসরণ করে। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণসহ একাডেমিক বিষয়গুলো ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরাসরি কোনো মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেই।
প্রশ্নকর্তা অভিযোগ করেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নামে দেশীয় সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন একটি শ্রেণি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। তাদের যে শিক্ষা দেওয়া হয় তাতে দেশ ও জাতির প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করছে না।
জবাবে মন্ত্রী বলেন, অত্যাধুনিক শিক্ষার নামে যাতে দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশ বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য দপ্তর ও সংস্থার মাধ্যমে মনিটরিং জোরদার করা হবে। সুনিদিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ জাতীয় অভিযোগ পাওয়া গেলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১২
এসএইচ/ইএস/সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর