ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংস্কার করে ছাত্র সংসদভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি করার প্রত্যাশা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো।
শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংলাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর মুখপাত্ররা রাজনীতির বিষয়ে নিজ নিজ দলের বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা প্লাটফর্ম সোশ্যাল সাইন্সেস ইন প্রেক্সিসের-(এসএসপি) আয়োজনে ‘ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির ভবিষৎ: সংস্কারের রূপরেখা’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ ও সহকারী প্রক্টর প্রভাষক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া।
এতে রাজনৈতিক দলের নয়জন এবং দল নিরপেক্ষ হিসেবে তিনজন শিক্ষার্থী বক্তব্য দেন। এসময় কেন রাজনীতি চান এবং কীভাবে তাদের দর্শন সমাজ কাঠামোর প্রতি সমালোচনামূলক বয়ান তৈরিতে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করবে, তা জানতে চাওয়া হয়।
এসময় নেতারা প্রথম বর্ষ থেকে সিট নিশ্চিতকরণ, সিট দিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রোধ, ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার, হল ও অনুষদে রাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ একাধিক প্রস্তাব দেন।
নির্দলীয় প্যানেল থেকে সাইয়েদ আব্দুল্লাহ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অর্ডারে অনেক অসামঞ্জস্য আছে। তা সংশোধন করতে হবে। গঠনতন্ত্র সংস্কার করে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। তবে সেখানে কোনো দলীয় প্যানেল দেওয়া যাবে না। রাজনীতির বয়স ঠিক করে দিতে হবে। হল ও অনুষদভিত্তিক কোনো রাজনীতি করা যাবে না।
তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারেও যে বড় রাজনীতি হতে পারে, তা আমরা দেখেছি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষিত রাজনীতিবিদ তৈরির কারখানা করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র আবু বাকের মজুমদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন হয়। সেসব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নয় দফার সপ্তম দফায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা রয়েছে। এছাড়া হলে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বয়সসীমা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন তিনি।
ছাত্রদলের মুখপাত্র হিসেবে মল্লিক ওয়াসি উদ্দিন তামী বলেন, ছাত্রদল ক্যাম্পাসে শো-ডাউনের রাজনীতি করবে না। গণরুম-গেস্টরুম নিষিদ্ধ থাকবে। একই সঙ্গে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রাজনীতি ছাত্রদল করবে।
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ সম্ভব নয়। কোনো না কোনো ফর্মে তারা রাজনীতি করবেই। ফলে আমাদের একটি ‘রেগুলেশন’ কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে এবং তার ভিত্তি হবে গণতন্ত্র। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যাচের সিআর নির্বাচন গণতান্ত্রিক হতে হবে। সেখান থেকে সিআর কাউন্সিল গঠন করে শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে রেগুলেশনের একটি প্লাটফর্ম করা যেতে পারে।
একই সঙ্গে তিনি ডাকসুর পরিসর বৃদ্ধি, এর গঠনতন্ত্র সংস্কার করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের একটি প্লাটফর্মের প্রধান কখনো উপাচার্য হতে পারেন না। কিছু সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের বাইরে ডাকসুর পরিসর খুব বেশি না। তা বাড়াতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও অনুষ্ঠানের মডারেটর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ছাত্র রাজনীতি একটি অবিচ্ছেদ্য বিষয়। রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি সামাজিক চুক্তি দরকার। একদল ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করেছে। রাজনীতি যতটা না শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের দলের জন্য। ফলে আমাদের আজ এমন প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হচ্ছে যে এখানে ছাত্র রাজনীতি আসলেই দরকার কি না।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক হোসাইন আহমেদ জুবায়ের, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সংগঠকের নাইম উদ্দিন, শিক্ষার্থী তানজিনা তাসনিম হাফসা, নিশিতা জামান নিহা এবং ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০২৪
এফএইচ/এসআই