ভোলা: ১৬৫টি শিক্ষকের সৃষ্ট পদের মধ্যে মাত্র ৪৩ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে দ্বীপ জেলার একমাত্র উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ভোলা সরকারি কলেজ।
প্রায় ৫ দশক ধরে কলেজটি সুনামের সঙ্গে এ এলাকার মানুষকে আলোকিত করে আসছে।
পরিচিতি: সমাজ সেবক আলতাজের রহমান তালুকদার, হাজী খোরশেদ আলম, ইলিয়াস আলী মাস্টার, মো. ছিদ্দিক ও মোসলেউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষানুরাগীর প্রচেষ্টায় ১৯৬২ সালে ১৫.৬০ একর জমির ওপর কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন আ. হক মিয়া।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে কলেজটি ভোলা তথা দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার মধ্যে একমাত্র স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত লাভ করে।
কলেজ সূত্র জানায়, ১৯৭৯ সালে ভোলা সরকারি কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। ১৯৯৬ সালে অনার্স কোর্স চালু হয়। বতর্মানে ১৬টি বিষয়ে অনার্স, ১১টি বিষয়ে মাস্টার্স ও ডিগ্রিসহ (পাস) উচ্চ মাধ্যমিক চালু রয়েছে।
কলেজটিতে বিভিন্ন সেকশনে ১শ ৬৫ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও শিক্ষক আছেন মাত্র ৪৩ জন। ফলে, ১শ ২২ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে এখানে। এত কম শিক্ষক দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক, অনার্স, মাস্টার্স, ডিগ্রিসহ প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদান চলছে।
আর এত শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। অন্যদিকে, ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা। কলেজে শিক্ষকের সৃষ্ট পদ রয়েছে গড়ে প্রতি বিভাগে ৭/৬ জন।
ইংরেজি বিভাগে ৬ জনের মধ্যে আছেন ৩ জন, অর্থনীতিতে ৬ জনের মধ্যে ২, বাংলায় ৭ জনের মধ্যে ৪ জন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৭ জনের মধ্যে ৪ জন, ইতিহাসে ৪ জনের মধ্যে ২ জন, ইসলামীর ইতিহাসে ৪ জনের মধ্যে ৩ জন, দর্শনে ৪ জনের মধ্যে ২ জন, সমাজকর্মে ৬ জনের মধ্যে ১ জন, ভূগোলে ৫ জনের মধ্যে ৩ জন, গণিতে ৪ জনের মধ্যে ৩ জন, পদার্থবিজ্ঞানে ৪ জনের মধ্যে ২ জন, রসায়নে ৪ জনের মধ্যে ১ জন, উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞানে ৪ জনের মধ্যে ২ জন করে, মৃত্তিকাবিজ্ঞানে ৬ জনের মধ্যে ২ জন, হিসাববিজ্ঞানে ৬ জনের মধ্যে ৩ জন, ব্যবস্থাপনায় ৬ জনের মধ্যে ১ জন কর্মরত রয়েছেন।
এদিকে, দীর্ঘদিন থেকে কলেজটিতে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ও সমাজকর্ম বিভাগে ১ জন শিক্ষক থাকায় এ বিভাগে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
কলেজের শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি শিক্ষক সংকটের কারণে কয়েকবার মানববন্ধন ও ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করেও শিক্ষকের চাহিদা পূরণ করতে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই।
ভোলা সরকারি কলেজের অনার্স গণিত বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুন, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সালমান, ইংরেজি বিভাগের সুকান্ত সেন, লেলিন, ইভান, রাশেদুল আমিনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে জানান, দিন দিন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না শিক্ষক।
অনার্স পর্যায়ের একটি কলেজে একজন শিক্ষককে স্কুলের মতো করে ৫/৬টি বিষয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে করে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মইনুল ইসলাম মামুন বাংলানিউজকে বলেন, “অনার্স, মাস্টার্স শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পর উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদান সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ক্লাস নিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। অপরদিকে, ভোলা সরকারি কলেজে শিক্ষক সমস্যার পাশাপাশি রয়েছে অবকাঠামোগত সমস্যাও। "
এদিকে, শ্রেণীকক্ষের সমস্যা রয়েছে প্রকট। ৭০টি শ্রেণীকক্ষের প্রয়োজন থাকলেও রয়েছে মাত্র ৩৪টি। ছেলেদের জন্য ২টি ছাত্রাবাস থাকলেও মেয়েদের জন্য একটিও নেই। ফলে, বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা মেয়েদের নিরাপত্তা দেওয়া কলেজের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
কলেজের পুরনো ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ছাদ ও দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ছে। যে কোনো মুহূর্তে বগ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ওই ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে বিজ্ঞান ও সোস্যাল সায়েন্স বিষয়গুলোর ক্লাস হচ্ছে। এসব বিভাগের জন্য আলাদা ভবনের প্রয়োজন।
এছাড়া একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবনের সংকটে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কলেজ প্রতিষ্ঠাকালে শিক্ষকদের জন্য কয়েকটি টিনের ঘর নির্মাণ করলেও বর্তমানে এগুলোতে বসবাস করা সম্ভব নয়।
কলেজের ৩য় শ্রেণীর কর্মচারী পদে ১৪টি পদ থাকলেও ১ জনকে দিয়েই চালানো হচ্ছে ১৩ জনের কাজ। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ১৭টি পদের ভেতরে ৫ জন সরকারি বেতনভুক্ত হলেও বাকিরা চালানো হয় মাস্টাররোলের ভিত্তিতে।
ভোলা সরকারি কলেজের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে অধ্যক্ষ পারভিন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, “শিক্ষক সংকট, ৪র্থ শ্রেণী, ৩য় শ্রেণী কর্মচারীদের সরকারিকরণ, অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে বার বার চিঠি পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। ”
তিনি আরও জানান, কিছু শিক্ষক এখানে দেওয়া হলেও তারা এখনও ভোলায় যোগদান করেননি।
তিনি বলেন, "ভোলা কলেজে আরও ৫টি ভবন নির্মাণের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত একটির একাডেমিক ভবন নির্মাণের অনুমোদন হওয়ায় তার কাজ শুরু হয়েছে। "
আগামীতে ছাত্রীনিবাস, বিজ্ঞান ভবন, বাণিজ্য ভবন ও একটি হলরুম স্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১২
সম্পাদনা: মাহাবুর আলম সোহাগ, নিউজরুম এডিটর
আগামীকাল রোববার পড়ুন পটুয়াখালী সরকারি কলেজ বিষয়ে প্রতিবেদন