ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) পরিচালক গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
ডেইলিএডুকেশনডটনেট এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোলাম মোহাম্মদ বেআইনীভাবে প্রতিষ্ঠানের টাকা নিজ কাজে ব্যবহার করছেন। তার এ অপকর্মে সহায়তা করেছেন ইবনে সিনায় কর্মরত তার এক ঘনিষ্ঠ স্বজন। এছাড়া গোলাম মোহম্মদ কুখ্যাত মেজর ডালিমের আত্মীয় হন বলেও জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গোলাম মোহাম্মদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সংবিধি লঙ্ঘন করে একক নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী আমানত খুলেছেন। ইনস্টিউটের গভর্নিং বডিকে না জানিয়ে শুধু সচিব ও উপগ্রন্থাগারিকের অনুমতি নিয়ে স্থায়ী আমানতটি খুলেছিলেন তিনি। এমনকি মেয়াদপূর্তির পর তিনি ওই আমানতের বিপরীতে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ঋণও নিয়েছেন।
জানতে চাইলে, একক নামে আমানত খোলা এবং এর বিপরীতে ঋণ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি। আবার এও বলেছেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সংবিধিতে কী লেখা আছে তা তার জানা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, সতর্ক করার জন্য তাকে আর্থিক সংবিধি সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছিল অনেক আগেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামালউদ্দীন বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটে থাকলে তা গুরুতর অপরাধ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে। ”
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালের ২৩ আগস্ট সোনালী ব্যাংকে থাকা আইবিএ লাইব্রেরির সঞ্চয়ী হিসাব থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে নিয়ে ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স করপোরেশন লিমিটেডে (ডিবিএইচ) একক নামে একটি স্থায়ী আমানত খোলার নির্দেশ দেন গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী। পরদিন পৌণে দশ শতাংশ সুদ হারে তিনি আমানতটি (ডিপোজিট নং ৭১০০০১৯৯৯১) খোলেন।
ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স করপোরেশন লিমিটেডে গৃহায়ন খাতে অর্থায়নকারী একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কোনও তফসিলী ব্যাংক নয়।
জানা যায়, আইবিএতে ভর্তি হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লাইব্রেরি সিকিউরিটি মানি হিসেবে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা রাখা হয়। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে চলে যাওয়ার সময় এই টাকা ফেরত দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থীই টাকা ফেরত না নেওয়ায় বছরের পর বছর এগুলো জমা হয়ে বড়ো অঙ্কের টাকা হয়েছে। এছাড়া প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের দেওয়া লাইব্রেরি ফির টাকাও জমা হয়। এ টাকাগুলো নিয়েই সোনালী ব্যংকে আইবিএ লাইব্রেরির একটি সঞ্চয়ী হিসাব (হিসাব নং-০৪৪০৫৩৪০১২৪০১) রয়েছে।
জানা যায়, পরিচালকের একক নামে স্থায়ী আমানত খোলার বিষয়টি জানাজানি হলে ২০১১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালকের দপ্তর থেকে সব অনুষদের ডিন, হলের প্রাধ্যক্ষ, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, বিভাগীয় অফিস প্রধান বরাবর আর্থিক লেনদেনের নিয়ম সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ শীর্ষক ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যে কোনো অফিস, হল ইনস্টিটিউট ও বিভাগসমূহের সঞ্চিত অর্থ স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদে করতে হলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে তফসিলী ব্যাংকে এবং অবশ্যই যৌথ নামে করতে হবে। অন্য কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা যাবে না। ইতিমধ্যেই একক নামে কোনও বিনিয়োগ হয়ে থাকলে তা যৌথ নামে রূপান্তর করার নির্দেশও দেওয়া হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই বিজ্ঞপ্তির পরও গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী স্থায়ী আমানতটি তফসিলী ব্যাংকে হস্তান্তর বা যৌথ নামে করেননি। ডিবিএইচ থেকে প্রাপ্ত স্থায়ী আমানতটির হিসাব বিবরণী থেকে দেখা যায়, ২০১১ সালের ২৪ আগস্ট স্থায়ী আমানতের মেয়াদপূর্তির পর তিনি এক লাখ ৭৩ হাজার পাঁচশ টাকা সুদ উত্তোলন করেন। ওইদিনই আসলের বিপরীতে ১৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকার ঋণ নেন তিনি।
আইবিএর ভারপ্রাপ্ত সচিব মনজুরুল হক বলেন, “অনেক আগে পরিচালক একক নামে একটি স্থায়ী আমানত খুলেছিলেন। এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের গভর্নিং বডিতে কোনও আলোচনা হয়নি। ”
নিয়ম জানা না থাকায় এফডিআরটি করার অনুমোদন দিয়েছিলেন দাবি করে তিনি বলেন, “স্থায়ী আমানতটির টাকা কোথায় কিভাবে আছে বা কোনও কাজে ব্যবহার করা হয়েছে কিনা সে বিষয়েও তার জানা নেই। ”
উপগ্রন্থাগারিক মো. শেখ সাদী বলেন, “পরিচালকের নির্দেশেই হিসাবটি খোলা হয়েছে। ” এফডিআরটি লাভসহ যথাসময়ে মূল ফান্ডে জমা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গোলাম মোহাম্মদ চৌধরী এফ ডি আর করার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, “একক নামে একটি এফডিআর করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি আমি অবগত নই। ” এফডিআরের বিপরীতে ঋণ নেওয়ার বিষয়টিও তিনি স্বীকার করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১২
এজে