ঢাকা, বুধবার, ১৮ পৌষ ১৪৩১, ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০ রজব ১৪৪৬

শিক্ষা

‘ঘৃণাস্তম্ভের’ গ্রাফিতি মুছে ফেলার ঘটনায় প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪
‘ঘৃণাস্তম্ভের’ গ্রাফিতি মুছে ফেলার ঘটনায় প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন মেট্রোরেলের পিলারে (ঘৃণাস্তম্ভ) থাকা শেখ হাসিনার গ্রাফিতি মুছে ফেলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।  

শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে সন্ধ্যায় এ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।

মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পায়রা চত্বর থেকে শুরু হয়ে ভিসি চত্বর, হল পাড়া প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। বিক্ষোভ মিছিলে বাম ছাত্রসংগঠন ও ছাত্রদলের কিছু কর্মীকেও অংশ নিতে দেখা যায়।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘ওয়াসিম-সাইদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘বাহ ভিসি চমৎকার, ফ্যাসিবাদের পাহারাদার’; ‘বাহ প্রক্টর চমৎকার, স্বৈরাচারের পাহারাদার’; ‘প্রক্টরকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে’; ‘স্বৈরাচারের দোসর তারা, ঘৃণাস্তম্ভ মুছল যারা’; ‘চব্বিশের চেতনা, বৃথা যেতে দেব না’সহ নানা স্লোগান দেন।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিদুজ্জামান জ্যোতি বলেন, গতকাল ঘৃণাস্তম্ভে শেখ হাসিনার গ্রাফিতি মুছে দিয়েছে প্রশাসন। আগের প্রশাসন আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ কায়েমে সহযোগিতা করেছে। এখনো তারাই এসব করে বেড়াচ্ছে। আমরা সংস্কার চাই। দায়িত্ব পালন করতে না পারলে প্রক্টর পদত্যাগ করুক।

আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম রিয়াদ বলেন, ‘ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা এবং পাঁয়তারায় যুক্ত আছে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও বিদ্যালয় প্রশাসন। খুবই পরিকল্পিতভাবে শেখ হাসিনার ঘৃণাস্তম্ভ মুছে ফেলার চেষ্টা করা হলো। পরিকল্পিতভাবে ছবি মোছা শুরু করে মাথার উপরের দিক থেকে। ’

তিনি প্রশাসনের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারা যদি ভুলের উপরে ক্যাম্পাস চালাতে থাকেন— তাহলে আমরা কীভাবে ক্যাম্পাসে টিকব। যেদিন এ ক্যাম্পাসে একজন মানুষ খুন হন, সেদিনই প্রক্টর তার আসনে থাকার নৈতিক ভিত্তি হারিয়ে ফেলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ জিম বলেন, ২ আগস্ট স্বৈররানি শেখ হাসিনার গ্রাফিতিতে জুতা এবং কালি লেপনের মাধ্যমে আন্দোলনে নতুন বাতাস এসেছিল। আপনারা তা মুছে দিচ্ছেন কয়েক মাসের মধ্যেই। ১৫ বছর পর আপনারা তাহলে কী করবেন?  

তিনি বলেন, আমরা ফেসবুকে অনেককেই দেখছি এ বিষয়ে প্রক্টরের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করছেন। পরে আপনাদেরও স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে পরিগণিত করা হবে।  

গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঘৃণাস্তম্ভটিতে থাকা গ্রাফিতি মুছে ফেলা হচ্ছিল। বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে ‘ঘৃণাস্তম্ভে’ শেখ হাসিনার আরেকটি গ্রাফিতি আঁকা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের অফিস থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এটি প্রক্টরিয়াল টিমের অনিচ্ছাকৃত ভুল। এ জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আমরা আরও সতর্ক থাকার অঙ্গীকার করছি। প্রক্টরিয়াল টিমের উপস্থিতিতে গত রাতেই শিক্ষার্থীরা মুছে ফেলা গ্রাফিতি অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এঁকেছেন। স্তম্ভটিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘৃণাস্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। ’

এর আগে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর জনতা এ গ্রাফিতিতে জুতা নিক্ষেপ, রক্তের প্রতীক স্বরূপ লাল রং, ইট-পাটকেল ও ঝাড়ু মেরে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করে। ফলে একসময়ের গ্রাফিতি জনতার ক্ষোভ ও ঘৃণার প্রতীকে রূপ নেয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।