ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সমাধানে নেই প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ

পেটের পীড়ায় নাজেহাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা-

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৫ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১০

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মার্স্টাসের শিক্ষার্থী দীপায়ন সিকদার। থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে।

বছরে ৩ থেকে ৪ বার পেটের অসুখে ভোগেন। এঅবস্থায় চিকিৎসা নিতে যান বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে। দীপায়ন বলছিলেন মেডিকেল সেন্টারে গেলেই পাই গৎবাধা কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুল আর তিনটা স্যালাইন। মাঝে মাঝে অসুখের মাত্রা বাড়তে থাকলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আলাদা কাগজে লিখে দেন ভালো মানের ট্যাবলেটের নাম।   যা বাইরে থেকে কিনতে চলে যায় গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। ”

রাজীব ত্রিপুরা আর তুহিন শুভ্র অধিকারির অবস্থা আরও করুণ। গত এক সপ্তাহ ধরে ভুগছেন ডায়ারিয়ায়। মেডিকেল সেন্টার থেকে তারাও ফিরে এসেছেন একই পথ্য নিয়ে। রাজীব বলেন, ” বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই এই দশা। কোনো প্রতিকার নেই। ”

একই হলের আরও দু’জন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তন্ময় ভট্টাচার্য আর সমীরণ মন্ডল এই ধারাবাহিক অসুস্থতার জন্য দায়ী করছেন হলের খাবারকেই। খাবারে তেলাপোকা, মাছি থেকে শুরু করে টিকটিকি পর্যন্ত পাওয়ার ঐতিহ্য আছে এই হল কান্টিনের খাবারে। পরে হলের ছাত্রদের নিজেদের উদ্যোগে ক্যান্টিনের পাশাপাশি আরও তিনটি মেস প্রতিষ্ঠা করা হয়।

খাবারের মানের কিছুটা নিম্নমানের হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরবরাহ করা পানির প্রশংসা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের প্রধান মেডিকেল অফিসার এ. কে. এম আব্দুর রহমান। চিকিৎসার মানের প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি-কে বলেন, “ এ বছরও ঔষুধ ও যন্ত্রপাতি খাতে ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গ্রীস্মের সময় ডায়রিয়ার যে প্রবণতা দেখা দেয় তা প্রতিহত করতে এরই মাঝে পর্যাপ্ত ঔষুধ কেনা হয়েছে ”

সেই সঙ্গে তিনি চিকিৎসক সংকটসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা দূর করতে বাৎসরিক ৪০ লাখ টাকা বাজেট বরাদ্দের পাশপাশি মেডিকেল সেন্টারকে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপান্তরেরও দাবি জানান।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীদের শারীরিক দুরবস্থা নিয়ে নেই কোনো গবেষণা পত্র। তারপরও গ্রীস্মে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ ঠেকাতে জনসচেতনতা বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রের গবেষক ও লংগার স্টে ইউনিটের প্রধান ডঃ মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন।

তিনি আরও বলেন, “ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাটির নিচের স্তরের পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ পানি উত্তোলন করে বিতরণ করা হলেও এই পানি সরবারহের স্থান ধারাবাহিকভাবে পরিস্কার করা হয় না পাশাপাশি হলের খাবারগুলো সব সময় গরম করে পরিবেশন করা হয় না বলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হয় না। এই দু’টি বিষয় সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যাক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বাড়াতে সচেতনতামূলক প্রচারনা অব্যাহত রাখলে পেটের অসুখের মাত্রা আরও কমে আসবে। ”   

এবছর এপ্রিল মাসে আইসিডিডিআরবি আয়োজিত এক সম্মেলনে জাতীয় বক্ষব্যাধি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্রের মহাপরিচালক অধ্যাপক আব্দুল মালিক বলেন, ” বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবেদন ২০০২ অনুযায়ী বিশ্বের শতকরা ৪০ ভাগ মৃত্যুর কারন দীঘস্থায়ী রোগসমূহ। আমাদের দেশেও এই প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। আর ক্রনিক রোগের চিকিৎসা যেহেতু খুবই ব্যায়বহুল তাই আমাদের এটি প্রতিরোধের দিকে এখনই বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। ”

এই প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘ দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। হলের খাবারের মান আসলেই ভালো নয়। তবে অজস্র সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন পরিস্থিতির উন্নয়নে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এতদিনের জমানো জঞ্জাল সরাতে সময় লাগবে। ’

শিক্ষার্থীদের ধৈর্য্য ধরার অনুরোধের পাশপাশি তিনি আরও জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারকে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে কবে নাগাদ এই উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হবে তা তিনি জানান নি।

হাজারো সমস্যা আর তার সমাধানে অগণিত সীমাবদ্ধতার কথা আর শুনতে চান না বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের বাসিন্দারা। তাদের একটিই দাবী এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান।

বাংলাদেশের স্থানীয় সময়: ১৫৪৫ ঘন্টা, ৭ মে, ২০১০
রাফে সাদনান আদেল আরএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।