ঢাকা: নতুন বছরের শুরুতে আরও একটি বিশ্বরেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। ৩১ কোটির বেশি পাঠ্যপুস্তক প্রায় সোয়া চার কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করে পাঠ্যপুস্তক প্রদানে বিশ্বে অনন্য নজির গড়া হলো।
এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবপতাকা ও সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার বিশ্বরেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ।
২০১৪ শিক্ষাবর্ষে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, এবতেদায়ি, দাখিল ও কারিগরি স্তরে মোট ৩১ কোটি ২৭ লাখ ২৫ হাজার ৫২৬ টি পাঠ্যপুস্তক ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার ২০১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিতরণ করা হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ স্কুলটির প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী আসফিয়া আক্তার সামিয়ার হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসবে’ বই বিতরণের উদ্বোধন করেন। এরপর আকাশে রঙিন বেলুন উড়িয়ে দেওয়া হয়।
এর আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যখন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচি হাতে নিই, তখন আমার সহকর্মী ও ঘনিষ্ট বন্ধুবান্ধবসহ সবাই বলেছিলেন, আমি পাগল হয়ে গেছি। কারণ, বিশ্বের কোনো ধনী দেশও এতো সংখ্যক বই বিনামূল্যে দিতে পারে না। আজ আমি মনে করি, সেদিন আমিই সঠিক পথেই ছিলাম।
তিনি বলেন, বছরের শুরুতেই পাঠ্যপুস্তক উৎসবের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পারছি। এটা যে আমার জন্য কতবড় আনন্দের তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে বিপুল সংখ্যক বই সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়াটা বিরাট এক চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির মধ্যে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া ছিল চ্যালেঞ্জের।
কিন্তু শিক্ষক অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমরা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০১৫ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে ছেলে-মেয়ের সমতা অর্জন। কিন্তু তার অনেক আগেই আমরা সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছি, যা বিশ্বের অন্য কোনো দেশ পারে নি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বাংলাদেশে এখন ছেলের চেয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি।
আগামী দুই বছরের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে উচ্চ শিক্ষায় ছেলে ও মেয়েদের সমতা নিশ্চিত করা হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
আজকের এ ক্ষুদে শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কর্মসূচি সফল করার জন্য এনসিটিবি সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান শিক্ষামন্ত্রী।
হরতাল, অবরোধের মধ্যেও সময়মতো দেশের প্রতিটি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলে পাঠ্যপুস্তক পাঠাতে এ বছর ১৬ হাজার ৪২টি ট্রাক ব্যবহার করা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো ৫১ হাজার স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়েছে। সেখানে ৬০ লাখ ১৬ হাজার ৫১৬ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ কোটি ৮০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮টি বই ছাপানো হয়েছে, যা শিগগিরই বিতরণ করা হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব কাজী আখতার হোসেন, এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর শফিকুর রহমান প্রমুখ।
রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসার কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
নতুন বই হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। হাত নেড়ে নতুন বই তুলে উৎসব প্রকাশ করে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে নতুন বইয়ের ভেতর যে ভবিষ্যতে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার রঙিন স্বপ্ন লুকানো, তা খুঁজে বের করার শপথ নেয় তারা।
প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদিল বলে, নতুন বই পেয়ে আমার অনেক ভালো লাগছে। আমি পড়াশোনা করে অনেক বড় হতে চাই।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিলভিয়া প্রভা বলে, অনেক ভালো লাগছে। নিয়মিত পড়াশোনা করে আমি সব ক্লাসে জিপিএ-৫ পেতে চাই।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনন্যা পুষ্প বলে, নতুন বই মানে নতুন স্বপ্ন, নতুন উদ্যমে জেগে ওঠা। নতুন স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় অংশ নিতে চাই।
এভাবে হাজারো শিক্ষার্থীর কণ্ঠে উচ্চারিত হয় স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার শপথ।
এর আগে গত বুধবার গণভবনে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে নতুন বই তুলে দিয়ে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের আমলে ২০১০ সাল থেকে বিনামূল্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়।
* দেশজুড়ে বই উৎসব
বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৪/আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা
সম্পাদনা: জনি সাহা, নিউজরুম এডিটর/জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর