সিলেট: সিলেটের অগ্রগামী বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজিয়া মেহজাবীন বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। বছরের শুরুতেই নতুন শ্রেণির নতুন বই হাতে পাওয়ার আনন্দে উল্লসিত সে।
শুধু নাজিয়া নয়, সিলেট জেলার আড়াই হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী নতুন বই পেয়ে উল্লসিত।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে সিলেটের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে এ নতুন বই তুলে দেওয়া হয়।
এদিকে সকাল ১১টায় নগরীর কুমারপাড়া কাজী জালাল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক উৎসবের উদ্বোধন করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এ সময় মেয়র আরিফুল হক বলেন, বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া সরকারের একটি বড় সাফল্য।
একই সময় নগরীর অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক উৎসবে অংশ নেন- সিলেট বিভাগীয় কমিশনার এনএম জিয়াউল আলম, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মকবুল হোসেন ভুঁইয়া, জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম, সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।
এদিকে পাঠ্যপুস্তক উৎসবে সিলেটসহ বিভাগের চার জেলা হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের ৯ হাজার ১২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন বই বিতরণ করা হয়েছে।
নগরীর বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখা গেছে, প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর হাতেই নতুন বই। শিক্ষার্থীরা নতুন বই পেয়ে খুশিতে নেচে গেয়ে বেড়াচ্ছে স্কুলের মাঠে। অনেকেই আবার বই উল্টিয়ে কবিতা ও গল্প পড়া শুরু করে দিয়েছে।
নতুন বই পেয়ে আনন্দে আত্মহারা রায়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র নাফিউল। পরিচিত অপরিচিত যাকেই সামনে পাচ্ছে তাকে বইগুলো দেখাচ্ছে।
অগ্রগামী স্কুলের ১ম শ্রেণির ছাত্রী ফাহমিদা নতুন বই হাতে পেয়েই সবার আগে মাকে বই দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ফারহানা জানায়, ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই নতুন বই পেয়ে গেছি। তাই ক্লাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পিএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেবো।
দুপুরে কাজিটুলার কাজী জালাল উদ্দিন বালক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এ স্কুলে সকালে অনুষ্ঠান করে বই বিতরণ শুরু করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এর পর থেকেই নতুন বই নিয়ে স্কুল প্রাঙ্গণে ছোটাছুটি করছে ছেলে-মেয়েরা।
প্রথম শ্রেণির ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা বই পাওয়া মাত্রই ময়লা ও ছিঁড়ে যাওয়ার ভয়ে সযত্নে তা ব্যাগের ভেতর ঢুকিয়ে রেখেছে। আবার কেউবা বুকের ভেতরে চেপে ধরেছে যাতে কেউ নিতে না পারে!
ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষিকা মোছাম্মা বেগম বাংলানিউজকে জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৩টি করে এবং তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা ৬টি করে বই পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এতে শিক্ষার্থীরা অধিক আগ্রহ নিয়ে এবং নতুন উদ্যমে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করবে।
এদিকে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেও বছরের প্রথমেই বই হাতে পাওয়ায় বই নিয়ে অভিভাবকদের শঙ্কাও কেটে গেছে।
অভিভাবক সোহেল আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় বছরের শুরুতেই বই পাওয়া নিয়ে শঙ্খায় ছিলাম। কিন্তু সরকার যথাসময়েই বই পৌঁছে দিয়েছে শিক্ষার্থীর হাতে।
আরেক অভিভাবক টুটুল আহমেদ বলেন, নতুন বইয়ের ঘ্রাণে অন্যরকম একটা অনুভূতি আছে। নতুন বই হাতে পাওয়া মাত্র সেই বইয়ের সৌরভে মুখরিত হয়ে উঠেছে আমাদের চারপাশ। ছোট শিক্ষার্থীদের আনন্দে আমরাও অনেক আনন্দিত।
এদিকে কিছু উপজেলায় এখনো ঐচ্ছিক ও ইংরেজি মাধ্যমের বই পৌঁছেনি। জানুয়ারি মাসের মধ্যে এসব বই সংশ্লিষ্ট স্কুলে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানায়, এ বছর এনসিটিবি সিলেট বিভাগে ৮৪ লাখ ২০ হাজার ৮০৬টি বই বরাদ্দ দিয়েছে। যা বিভাগের ৯ হাজার ১২৪ স্কুলের বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৮ লাখ ২১ হাজার ৫৪৭, সুনামগঞ্জে ২২লাখ ১হাজার ৪০২, হবিগঞ্জে ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৯২৯, মৌলভীবাজারে ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ৯২৮টি বই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদের মধ্যে সিলেট এবং মৌলভীবাজার জেলার বরাদ্দকৃত সব বই এসেছে। অন্যদিকে সুনামগঞ্জে ২১লাখ ৬৩হাজার ৭৮৫, হবিগঞ্জে ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৮০২টি বই পেয়েছে। বাকি বই এই জানুয়ারির মধ্যে এসে পৌঁছাবে।
উল্লেখ্য, ২০১০সাল থেকেই প্রতি বছরের পয়লা জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়। তবে এবার পয়লা জানুয়ারি ছুটি থাকায় এ উৎসব একদিন পিছিয়ে ২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার উদযাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৪
সম্পাদনা: মিলিতা বাড়ৈ, নিউজরুম এডিটর, সুকুমার সরকার, আউটপুট এডিটর কো-অর্ডিনেশন