বাকৃবি: প্রকৃতিতে শীতের আমেজ লেগে গেছে অনেক আগেই। পাতাঝরা বৃক্ষেও লেগেছে তার ছোঁয়া।
বাংলা ভাষায় প্রবাদ রয়েছে-ঊনো বর্ষায় দুনো শীত। অর্থাৎ, যে বছর বৃষ্টিপাত কম হয়, সে বছর শীতের প্রকোপ বেশি হয়। যার প্রমাণ মিলেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে শীতের আগমনে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, গতবারের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৬ শতাংশ কম। আর তাই এবার শীতের তীব্রতাও বেশি হওয়ারই কথা।
প্রতিবারের তুলনায় এবারের শীত খানিকটা আগেই হাজির হয়েছে প্রকৃতিতে। ময়মনসিংহ শহরে এখনো শীতের তীব্রতা বেশি না হলেও বাকৃবিতে বিষয়টা একেবারেই ভিন্ন। শীত এখানে ভালোই পড়ছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি ও পরিবেশটা অনেকটাই গ্রামীণ আবহে তৈরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ। এ কারণে শীতের প্রকোপটা অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিকেই রয়েছে গ্রাম। আর তাই বাকৃবিতে শীতের আগমন কোনোভাবেই গ্রাম থেকে আলাদা নয়। গ্রামের শীতের আমেজ পেতে ঘুরে যেতে পারেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
শীতের আগমন বুঝা যায় গোধূলীর সোনালী সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই ঘন কুয়াশার চাদরে আকড়ে ধরা প্রকৃতির দিকে তাকালে। হাড়ে কাঁপন ধরানো হিমেল বাতাসে ক্যাম্পাসের সবার গায়েই এখন শীতের গরম কাপড়। শুধু তাই নয়, বাহারি রংয়ের আর ডিজাইনের গরম কাপড়ের ফ্যাশন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের মধ্যে।
সবচেয়ে বড় আকর্ষণ বাকৃবি ক্যাম্পাসের পিঠা। শীতের পিঠা-পুলির উৎসব বলতে পিঠার দোকানকেই বুঝায়। দুপুরের পর থেকেই রাত ৮টার দিক পর্যন্ত এসব দোকানে মিলে শীতের বিভিন্ন রকম পিঠা। আর শীতের এই পিঠার স্বাদ নিতে সারাক্ষণ এসব দোকানে ভিড় লেগেই থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কামাল-রণজিত (কে.আর) মার্কেট, জব্বারের মোড়, শেষ মোড়, শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল, সুলতানা রাজিয়া (অ্যানেক্স) হল, হতাশার মোড়, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে শীতের পিঠা খাওয়ার জন্য এতটাই ভিড় থাকে যে, পিঠা পেতে হলে অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করতে হয় বেশ কিছু সময়। এই ভিড়টা শুধু শিক্ষার্থীদের নয় এতে যোগ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।
শীতের পিঠা নিয়ে অনেকটা আগ্রহ নিয়ে কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী ফরিদ বলেন, আমার বাসা নীলফামারীতে। সেমিস্টার শেষ না হলে বাসায় যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই আমরা যারা পরিবারের সবাইকে রেখে বাকৃবির ক্যাম্পাসে থাকি, তাদের শীতের পিঠা মানেই তো খালাদের (দোকানের নারী কর্মী) হাতের পিঠা।
শীতে বাকৃবি ক্যাম্পাসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে ফুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কোনো জায়গা পাওয়া যাবেনা যেখানে ফুল নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে রয়েছে ফুলের বাগান। এর মধ্যে সমৃদ্ধ হচ্ছে শহীদ নাজমুল আহসান হল। শীতের শুরুতেই এই হলে পাওয়া যায় ক্যাম্পাসের সব ধরনের ফুলের প্রজাতি। ফুলের জন্য রীতিমত গর্বই করে এই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় ৭১, শহীদ মিনার, মরণ সাগর, টিএসসি চত্বর, প্রশাসনিক ভবন, সমাবর্তন মাঠ, কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তন, বোটানিক্যাল গার্ডেন, হর্টিকালচার সেন্টারসহ আরও অনেক স্থান ফুলের জন্য বিখ্যাত। মেয়েদের হলেও রয়েছে ফুলের ভাল সংগ্রহশালা। বিভিন্ন অনুষদও পিছিয়ে নেই ফুল বাগানের দিক থেকে।
শীতে বাকৃবির ফুলের কথা বলতে গিয়ে জাহিদ, মূসা, নাজমুল, মারুফ, নাঈম, হিয়া জানান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হতে আসেন, তাদের প্রথমেই মন কাঁড়ে ফুলের সৌন্দর্য। এমন ফুলের বাহার বাংলাদেশের অন্যকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া যাবেনা। তাছাড়া, এইসব ফুল আমাদের শুধু সৌন্দর্য আর প্রশান্তিই দেয় না আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাতেও ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ধরনের ফুল সম্পর্কে আমরা এখান থেকেই ধারণা পাই।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৪
সম্পাদনা: মনিরুজ্জামান ও শামীম হোসেন, নিউজরুম এডিটর