জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাতীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পর বিপরীত মেরুতে থাকলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীপন্থি ও বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা একই প্যানেলে নির্বাচন করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে ‘শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ-২০১৪’র নির্বাচনে একটি প্যানেলে আওয়ামী ও বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করছেন।
মূলত সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী এবং আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী শিক্ষকরা প্যানেল করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী আওয়ামী ও বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা ‘সাধারণ শিক্ষক ফোরাম’ নামেই জোটবদ্ধ হয়ে প্যানেল ঘোষণা করেছেন। যেখানে রয়েছেন ৯ জন আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ও ৬ জন বিএনপিপন্থি শিক্ষক।
অপরদিকে আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী আওয়ামীপন্থি ও সতন্ত্র শিক্ষকরা ‘মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতিবাদী চেতনায় বিশ্বাসী জোট এবং স্বতন্ত্র শিক্ষকদের সম্মিলিত প্যানেল’ নামে জোটবদ্ধ হয়ে প্যানেল ঘোষণা করেছেন। যেখানে ১১ জন আওয়ামীপন্থি ও ৪ জন সতন্ত্র শিক্ষক নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
‘সাধারণ শিক্ষক ফোরাম’ প্যানেলে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন সভাপতি পদে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহমদ, কোষাধ্যক্ষ পদে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক কৌশিক সাহা, সদস্য পদে শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কবিরুল বাশার, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদা পারভীন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. খালিদ কুদ্দুস, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান ও ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাহেদুর রশিদ।
সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ও ‘সাধারণ শিক্ষক ফোরাম’র আহ্বায়ক অধ্যাপক মুহম্মদ হানিফ আলী গ্রুপের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা এই প্যানেলে নির্বাচন করছেন।
এই প্যানেলে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন সম্পাদক পদে ফোরামের সদস্য সচিব ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ কামরুল আহসান, সহ-সভাপতি পদে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ফারুক আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক পদে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আবু সাঈদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য পদে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছালেহ আহাম্মদ খান, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুব কবির, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. নূরুল ইসলাম।
অপরদিকে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতিবাদী চেতনায় বিশ্বাসী জোট এবং স্বতন্ত্র শিক্ষকদের সম্মিলিত প্যানেল’ এ আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন সহ-সভাপতি পদে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. আমিনুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক পদে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ পদে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক মো. ফজলুল করিম পাটোয়ারী, সদস্য পদে জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক আমিনা ইসলাম, পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এলমা জান্নাতুল ফেরদৌসী, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কে. এম মহিউদ্দিন, রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান, ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. আফাজ উদ্দিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. সাজেদ আশরাফ করীম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা ও প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল আহমেদ।
‘সাধারণ শিক্ষক পর্ষদ’ ও ‘নীল দল’র আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা এই প্যানেলে নির্বাচন করছেন।
এই প্যানেলে সতন্ত্র শিক্ষকদের মধ্যে সভাপতি পদে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের নইম সুলতান, সম্পাদক পদে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মালিহা নার্গিস আহমেদ, সদস্য পদে ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খয়রুল বসর ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ খান।
‘সাধারণ শিক্ষক ফোরাম’ প্যানেলে সভাপতি পদপ্রার্থী ও আওয়ামীপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, নির্বাচনে বিএনপি-আওয়ামী লীগ কোনো বিষয় নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে আমরা যারা আন্দোলন করেছিলাম তারা একজোট হয়ে নির্বাচন করছি।
মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতিবাদী চেতনায় বিশ্বাসী জোট এবং স্বতন্ত্র শিক্ষকদের সম্মিলিত প্যানেল’র সম্পাদক পদপ্রার্থী ও আওয়ামীপন্থি শিক্ষক মালিহা নার্গিস আহমেদ বলেন, যাদের কারণে দীর্ঘ ৮ মাস বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ আমি নির্বাচনে প্রতিন্দ্বিতা করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন হতে পারে তবে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে নয়।
এছাড়া আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাধারণ শিক্ষক ফোরাম’র বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘শিক্ষক মঞ্চ’। মঞ্চের সমন্বয়ক ও দর্শন বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন এ কথা জানান।
আগামী ২৯ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক মো. আকতার মাহমুদ এবং সহকারী নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রয়েছেন সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম ও সহকারী অধ্যাপক আদিল মুহাম্মাদ খান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৪