ঢাকা: শিক্ষার মানকে বাড়িয়ে বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যাওয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত পিএসসি-জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে অনেকটা সফল হয়েছি। এখন এটিকে বিশ্বমানের করাই বড় চ্যালেঞ্জ।
এ বছর ৯৯ ভাগ শিক্ষার্থীকে স্কুলে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের প্রাথমিকে ছেলে-মেয়ে সমতা অর্জন করার করা কথা ছিল। সেটি পেরিয়ে আমরা মাধ্যমিকেও তা অর্জন করেছি। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় মেয়েরা বেশি পাস করছে।
ডিআরইউয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষা পরিবারে সন্তানদের সম্মান দিচ্ছে এমন একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে কৃতজ্ঞ।
সাংবাদিকরা তাদের ছেলে-মেয়েদের সময় দিতে পারেন না জানিয়ে নাহিদ বলেন, এ পেশার কারণেই অনেকেই সময় দিতে পারছেন না। এ সবে ব্যস্ত থাকার পরেও আপনাদের সন্তানরা ভালো ফলাফল করেছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করি। তাদের অনুভূতি নিতে চাই। তাদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া জানতে চাই। শিক্ষার্থীদের মতামতগুলোকে দাপ্তরিক কাজে লাগাতে চাই।
তিনি বলেন, পিএসসি ও জেএসসিকে যখন আলাদা পরীক্ষা হিসেবে চালু করি, তখন অনেকেই আমার সমালোচনা করেছেন। অনেকেই বলেছেন, আমি নাকি পরীক্ষার সংখ্যার বাড়িয়েছি! কিন্তু, এখন সবাই এটার প্রশংসা করছেন।
তিনি বলেন, এসব পরীক্ষার মাধ্যমে ছেলে-মেয়েরা আত্মবিশ্বাসী হয়। তারা যদি আত্মবিশ্বাসী না হয়, তবে আমরা পিছিয়ে পড়বো। ছেলে-মেয়েরা যদি সামনে আগাতে না পারে, তবে দেশেও আগাবে না।
তাদের আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পাবলিক পরীক্ষাগুলো বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, গত সরকারের সময় ১৯ কোটি বই বিতরণ করার পর এ বছর ৩১ কোটি বই ছাপিয়ে রেকর্ড গড়েছি। বছরের প্রথম দিনে বই দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দ পৌঁছে দেওয়াই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, গত বছর ৯ নভেম্বর জেএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় হরতাল। এ সময় সব মিলিয়ে ৪ কোটি ছেলে-মেয়ে পরীক্ষার্থী ছিল। বাধ্য হয়ে বন্ধের দিন পরীক্ষা নিয়ে যথাসময়ে রেজাল্ট দিতে সক্ষম হই। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বছরের শুরুতে বই পৌঁছে দিতে সক্ষম হই।
পাসের হার বাড়লে শিক্ষার মান বাড়ছে না বলে যারা সমালোচনা করছেন, তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আমাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দেন। শুধরে নেবো।
শিশুদের শিক্ষার মান কমেনি দাবি করে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেকই দেশের মানের সঙ্গে তুলনা করলে হয়ত মনে হবে হয়নি। কিন্তু, আমাদের সেদিকে যাওয়াই আসল লক্ষ্য।
কোচিং ইচ্ছা করলেই বন্ধ করা যাবে না উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, এটার পেছনে অনেক শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে। এটা বন্ধ করতে হলে দরকার আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন।
সময়ের সঠিক ব্যবহার প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, তোমাদের সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, অনেক প্রতিযোগিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকে থাকতে হয়। আগামী দিনে আরো কঠিন প্রতিযোগিতা করতে হবে তোমাদের।
তিনি বলেন, এজন্য তোমাদের এখন থেকেই সেভাবে তৈরি হতে হবে।
সভাপতি শাহেদ চৌধুরী বলেন, এ বছর ২৭ জন শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা ও সনদ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিজনকে ২ হাজার টাকা, একটি সনদ ও অন্যান্য পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
ডিআরইউ সাংগঠনিক সম্পাদক মোরসালিন নোমানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, দফতর সম্পাদক শেখ জামাল হোসেন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৪