রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: দীর্ঘ ১০ বছর ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়াই আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।
১০ বছর আগের রাবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদ শেষ হলে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে, ১০ বছর ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কর্মকাণ্ড কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তারা সবাই এখন অছাত্র ও বিবাহিত।
এছাড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় হতাশ হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন কর্মঠ ও উদ্যমী নেতাকর্মীরা। এদের অনেকেই কোণঠাসা ও বাধ্য হয়ে পরবর্তীতে যোগ দিয়েছেন ছাত্রলীগে।
দীর্ঘদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটিহীন থাকায় এবং কোনো ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকায় ক্যাম্পাসে প্রায় অস্তিত্ত্বহীন হয়ে পড়েছে ছাত্রদল।
আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে উৎসাহী না হওয়ায় নতুন করে কমিটি দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে না বলে দাবি বর্তমান আহ্বায়কের।
দলীয় সূত্র জানায়, রাবিতে ছাত্রদলের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয় ২০০২ সালে। ওই কমিটিতে মতিউর রহমানকে সভাপতি ও আসলামুদ্দৌলাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে মেয়াদ শেষ হয় ওই কমিটির।
পরবর্তীতে ২০০৫ সালের এপ্রিলে নূরুজ্জামান সরকার লিখনকে আহ্বায়ক করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই আহ্বায়ক কমিটিকে ৬ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু ওই কমিটি ৫ বছর পার করে দিলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি।
সর্বশেষ ২০১০ সালের ২২ মে আরাফাত রেজা আশিককে আহ্বায়ক করে ও ১২ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকেও পরিবেশ সৃষ্টি করে ৬ মাসের মধ্যে নতুন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু চার বছর পার হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।
দীর্ঘদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিবাহিত ও অছাত্ররা। এখন যারা শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছেন তাদের অনেকেরই ছাত্রত্ব শেষ। আবার অনেকেই বিয়ে করে পুরোদমে সংসারী হয়েছেন।
বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত রেজা আশিকের ছাত্রত্ব শেষ হয় ২০০৫ সালে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিবাহিত জীবন-যাপন করছেন।
একই বিভাগ থেকে যুগ্ম আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মেদ পড়াশোনা শেষ করেন ২০১১ সালে। অপর যুগ্ম আহ্বায়ক তোজাম্মেল হক তোজা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন ২০০৪ সালে। আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন রানা মাস্টার্স শেষ করেন ২০০৬ সালে।
এছাড়া ইসলামের ইতিহাস ও সাংস্কৃতি বিভাগ থেকে যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল ইসলামের ছাত্রত্ব বাতিল হলেও পরে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে এমবিএ করছেন।
অপর যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আলিম রাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন ২০১২ সালে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইয়াছির আরাফাত বলেন, যোগ্য ও মেধাবীদের নিয়ে দ্রুত একটি কমিটি গঠন করা দরকার। যাদের হাত ধরে আগামীতে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের রাজনীতি চাঙ্গা হতে পারে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।
রাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরাফাত রেজা আশিক বলেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটির দেওয়ার জন্য পবিবেশ সৃষ্টি করেলও দলের কাঠামোগত জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং প্রশাসনের দমন-পীড়নের কারণে অনেক নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় শক্তিশালী কমিটি হবেনা ভেবে এতদিন কমিটি করা হয়নি।
দলের আন্দোলন সংগ্রামকে সামনে রেখে নতুন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৪