জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি): সিন্ডিকেট ও ডিন নির্বাচনকে সামনে রেখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক।
প্রচলিত নিয়ম উপেক্ষা করে বিভাগীয় অ্যাকাডেমিক সভায় শিক্ষকদের মতামত ছাড়া এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে বিভাগের সভাপতি ও উপাচার্যের কাছে তা বাতিল কিংবা স্থগিতের আবেদন করেছেন তারা।
শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নজিবুর রহমান দল ভারি করার উদ্দেশে বিভাগীয় সভায় আলোচনা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
বিভাগে বর্তমানে সেশনজট নেই, শিক্ষক সংকটও নেই। আগামী সিন্ডিকেট ও ডিন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতেই শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
এ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল চেয়ে বিভাগের ১৪ শিক্ষককের মধ্যে ৯ শিক্ষক গত ২ সেপ্টেম্বর বিভাগের সভাপতিকে একবার ও উপাচার্যের কাছে দুইবার আবেদন করেছেন।
আবেদনে বলা হয়, ২৭ আগস্ট প্রকাশিত শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে বিভাগের কোনো সভায় তা আলোচনা করা হয়নি। এছাড়া নতুন শিক্ষকের জন্য কোনো শূন্য বা সৃষ্ট পদও নেই।
বিভাগে বর্তমান শিক্ষকদের নিয়েই সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে কোনো সেশনজট নেই।
বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইব্রাহিম খলিল বাংলানিউজকে বলেন, বিভাগের স্বার্থে শিক্ষক নিয়োগসহ যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে অবশ্যই অ্যাকাডেমিক সভায় তা উত্থাপন করা হয়। আর তাদের মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করা হয়।
কিন্তু হঠাৎ করে কোনো আলোচনা ছাড়াই অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া ঠিক হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের কাছে আবেদন জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
ওই আবেদনে তারা বলেন, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অস্থায়ী ভিত্তিতে ৪জন প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে তা বিভাগের কোনো সভায় অনুমোদন দেওয়অ হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা জন্য বিভাগের সভাপতিকে প্রথমে মৌখিক ও পরে লিখিতভাবে জানানোর পরও কোনো সভা আহ্বান করা হয়নি বলে জানান শিক্ষকরা।
সর্বশেষ শনিবার ওই বিভাগের ৬জন শিক্ষক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাত করে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ার জন্য আবেদন করেন।
উপাচার্যকে শিক্ষকরা বলেন, বর্তমানে প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে কোনো সেশনজট নেই। বিভাগের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবেই চলছে।
এছাড়া প্রায় ২ বছর ধরে একজন প্রভাষক অস্থায়ী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তার চাকরি এখনও স্থায়ী করা হয়নি। এই মুহূর্তে অধিকাংশ শিক্ষকের মতামত না নিয়ে ফের ৪ শিক্ষক নিয়োগ দিলে বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। তাই বিষয়টি স্থগিত রাখা জরুরি।
অন্যথায় ভর্তি পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার কথাও উপাচার্যকে জানান তারা।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরোধিতাকারী শিক্ষকরা হলেন, অধ্যাপক ড. মো. শাহাদাত হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, ড. মো. ইব্রাহিম খলিল, ড. মোহা. সাবির হোসেন, সহকারী অধ্যাপক ফারহা মতিন জুলিয়ানা, হুসাইন মো. শাহজালাল, মাফরোজ আহমেদ বসুনিয়া, প্রভাষক কাজী সাইফুল ইসলাম এবং সুদ্বীপ পাল প্রমুখ।
যোগাযোগ করা হলে প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিভাগীয় অ্যাকাডেমিক সভায় আলোচনা করে শিক্ষকদের মতামত নিতে হবে এ ধরনের লিখিত কোনো নিয়ম নেই। সেশনজট দূর করার জন্য সভাপতি যে কোনো সময় শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারেন।
নিয়ম মেনেই শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, যারা এর বিরোধিতা করছেন তারা নিয়ম বর্হিভূতভাবে বিরোধিতা করছেন।
বিভাগের সেশনজট আছে কিনা জানতে চাইলে ড. নজিবুর রহমান বলেন, আংশিক সেশনজট আছে। তবে ৯জন শিক্ষক দেশের বাহিরে থাকায় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৪