ঢাকা: ভুয়া প্রশ্ন নির্ভরতায় এবার এইচএসসিতে খারাপ ফল করেছে যশোর শিক্ষাবোর্ড। গ্রামাঞ্চলের কলেজগুলোর কম পাস সার্বিকভাবে গড় পাসের হারকেও প্রভাবিত করেছে।
ঢাকা বোর্ডের চেয়ে ২৪ শতাংশ পাসের হার কমসহ অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় পিছিয়ে থাকা যশোর শিক্ষাবোর্ড ফল পুনঃনিরীক্ষণের পর প্রাথমিক অনুসন্ধানে কিছু কারণ চিহ্নিত করে আগামীতে এ সংকট কাটিয়ে উঠতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
গত ১৩ আগস্ট প্রকাশিত এবারের এইচএসসির ফলাফলে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে ৮৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭০ দশমিক ০৬ শতাংশ, রাজশাহীতে ৭৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ, সিলেটে ৭৯ দশমিক ১৬ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, বরিশালে ৭১ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও কুমিল্লায় ৭০ দশমিক ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়।
মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৯৪ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং কারিগরিতে পাসের হার ৮৫ দশমিক ০২ শতাংশ।
আর যশোর শিক্ষাবোর্ডে এবার পাসের হার ছিল ৬০ দশমিক ৮৫ শতাংশ, যা অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় সর্বনিম্ন।
পুনঃনিরীক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীরা আবেদন করলেও ফলাফলে তেমন পরিবর্তন আসেনি।
এবার পুনঃনিরীক্ষণের জন্য ২৮ হাজার ১০টি আবেদন পড়লেও মাত্র ৭২ জনের ফলাফলে পরিবর্তন এসেছে, ২ জন নতুন করে পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২১ জন।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা বাংলানিউজকে জানান, এ বোর্ডে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করেছে। ভালো কলেজগুলো পরীক্ষায় খারাপ করেনি।
বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থ, রসায়ন ও গণিতে এবার গতবারের তুলনায় ভালো ফল হয়েছে বলেও জানান কর্মকর্তারা।
তবে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফল খারাপ হয়েছে। আর এ বিভাগের পরীক্ষার্থীদের বেশির ভাগেরই ইংরেজিতে খারাপ ফল এসেছে।
যশোর শিক্ষাবোর্ডে এবার ইংরেজিতে পাসের হার ৬৫.০৭ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৭৫ শতাংশ।
গত ৩ এপ্রিল এইচএসসি, আলিম এবং এইচএসসি (বিএম/ভোকেশনাল) ও ডিআইবিএস পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় ৮ জুন।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠায় ৯ এপ্রিলের এইচএসসি ও ডিআইবিএসের (ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিস) ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরে স্থগিত পরীক্ষা ৮ জুন অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া গণিতসহ আরো কয়েকটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠলেও সরকারের পক্ষ থেকে তা নাকচ করা হয়।
ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র সহজেই ইন্টারনেটে ফেসবুক এবং মোবাইল এসএমএসে বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যায়।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুহম্মদ আবু দাউদ বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীরা ইংরেজির প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে সেগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, যদিও তা ভুয়া ছিল। এই ভুয়া প্রশ্ন অনুসরণ করতে গিয়ে খারাপ ফল করেছে তারা।
যদিও বিভিন্ন বোর্ডে এবার ইংরেজির প্রশ্নপত্র আলাদা হয়েছে- এটা শিক্ষার্থীরা আগে থেকে জানতো না।
এবার বিজ্ঞান বিভাগে ৮০ শতাংশ, বাণিজ্যে ৭৫ শতাংশ এবং মানবিকে ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে বলে জানান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।
প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, গ্রামের কলেজগুলো খারাপ ফল করেছে, এটাই কম পাসের কারণ- বলেন আবু দাউদ।
এসব কলেজে ভালোভাবে পাঠদান হয়নি বা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অমনোযোগী থাকতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
যশোর শিক্ষাবোর্ডে গত বছর পাসের হার ছিল ৬৭.৪৯ শতাংশ। এবার পাসের হার ১৭ শতাংশ কমে যাওয়ার কারণ আরো অনুসন্ধান করে আগামীতে যাতে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে সেজন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, পরীক্ষা কমিটিতে পিছিয়ে পড়া কলেজগুলোর তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মোট ৫২৮টি কলেজের মধ্যে খারাপ ফল করেছে প্রাথমিকভাবে এমন ১২০টি কলেজ চিহ্নিত করেছি।
ঈদের পর এসব কলেজে মোটিভেশন করবো। প্রয়োজনে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বাড়তি ক্লাস নেওয়া হবে- বাংলানিউজকে বলেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবু দাউদ।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৪