ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে প্রথম বর্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে আগামী বছর থেকে আগের বছরে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা শিক্ষার্থীরা আর ২য় বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কমিটির সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
কিন্তু গত তিন বছরের তথ্য বিশ্লেষণে ঢাবিতে ভর্তির ক্ষেত্রে দেো যায়, দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়েই বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন স্বপ্নের এ বিদ্যাপীঠে।
চলতি শিক্ষাবর্ষে যারা ন্যুনতম পাশ নম্বর পেয়ে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্যেও দ্বিতীয় বারের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি।
ঢাবির কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে (২০১৪) যারা ন্যূনতম পাশ নম্বর পেয়ে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই গত শিক্ষাবর্ষের (২০১৩) শিক্ষার্থী। অর্থাৎ দ্বিতীয় বারের ভর্তি পরীক্ষার্থী।
বিজ্ঞান অনুষদের অধীন ক ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় চলতি শিক্ষাবর্ষের মাত্র ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাশ করেছেন। বাকি ৭০ শতাংশই গত শিক্ষাবর্ষের।
ঢাবির অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক হাসিবুর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ঢাবিতে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থীই দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
এদিকে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বন্ধ করায় বিপাকে পড়েছেন চলতি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
তাদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্ত তাদের প্রতি অবিচার। কারণ তাদের জন্য নির্ধারিত আসনে ভাগ বসিয়েছে গতবারের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তারা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, যদি ভর্তি পরীক্ষার আগে এ সিদ্ধান্ত হত তাহলে তাদের প্রস্তুতি অন্যরকম হতে পারতো।
এ বছর বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মাদ রাইফেলস কলেজ থেকে প্রতিটি বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করা শিক্ষার্থী শারমিন জাহান তুলি এ খবর শোনার পর হতাশ।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার আগে এ সিদ্ধান্ত নিত তাহলে প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি থাকতো না, আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারতাম।
তাছাড়া এ বছর ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ছিল কম। তাই আমি মনে করি আমাদের প্রতি অবিচার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
চলতি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবি উপাচার্য বাংলানিউজকে বলেন, তাদের প্রতি অবিচার করা হয়নি। কারণ আমরা সিদ্ধান্তটি এক বছর আগেই জানিয়ে দিলাম যাতে তারা অন্য কোথাও ভর্তি হয়ে থাকতে পারে।
দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বন্ধ করার পেছনে কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দিলে অসম প্রতিযোগিতা হয়। কারণ চলতি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় কম পায়। অন্যদিকে দ্বিতীয়বারের শিক্ষার্থীরা একটি বছর বেশি পায় বলে তাদের প্রস্তুতি ভালো থাকে।
উপাচার্য আ আ মস আরেফিন সিদ্দিক বলেন, দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকায় অনেকে ঢাবিতে ভর্তি থাকার পরও পছন্দের বিষয়ে পড়ার জন্য পুনরায় পরীক্ষা দেয়। এদের মধ্যে প্রতিবছর ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী অন্য বিষয়ে চলে যাওয়ার ফলে ওই আসনগুলো ফাঁকাই থাকে। অনেকে আবার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল করেও দ্বিতীয় বার সুযোগ নেয়। ফলে অনেক আসন ফাঁকা থেকে যায়।
এ বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিয়েই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জনিয়ে তিনি বলেন, এছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি এবং কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৪