ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছে প্রথমবারে ভর্তির সুযোগ না পাওয়া ভর্তিচ্ছুরা। কিন্তু তাদের দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাংলানিউজকে জানান, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই। ২০১৫ সাল থেকেই দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বন্ধ থাকবে।
উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের মাত্র ২২দিন পর নেওয়া হয়েছে এ ভর্তি পরীক্ষা। প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় পাননি ভর্তিচ্ছুরা। একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নে অন্যকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরমও তোলেননি অনেকে।
দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ যখন বন্ধ করল ঢাবি কর্তৃপক্ষ ততদিনে শেষ হয়েছে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফরম তোলার সময়ও।
এমন সব অভিযোগ তুলে দ্বিতীয়বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ চান প্রথম বারে সুযোগ না পাওয়া ভর্তিচ্ছুরা।
শুক্রবার সকালে এ দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের শতাধিক ভর্তিচ্ছু টিএসসির রাজু ভাস্কয্যের পাদদেশে মিলিত হন।
তাদের সঙ্গে এসেছিলেন কয়েকজন অভিভাবকও। ভর্তিচ্ছুদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানায় ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশনসহ কয়েকটি বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাও।
ভর্তিচ্ছুদের শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলনে বাধা দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে মিছিল করে শাহবাগ যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অভিযোগ হুট করে ঢাবি কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে অবিচার করা হয়েছে পুরো ২০১৪ সালের ব্যাচের ওপর। কারণ তাদের জন্য নির্ধারিত আসনে আগের ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ভাগ বসালেও তারা সে সুযোগ পাচ্ছেনা।
তাছাড়া এবার অন্যান্যবারের তুলনায় অর্ধেকেরও কম সময় দেওয়া হয়েছে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য। ক্যালকুলেটরের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবারই প্রথম। ইংরেজি বিষয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও প্রথমবারের মত ‘ইলেকটিভ ইংরেজি’র শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। তাই অনেকে এতো কম সময়ে এতগুলো সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন নি বলে জানান তারা।
দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ না পেলে ভেঙে যাবে সন্তানের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন, নষ্ট হয়ে যাবে তার জীবন। এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেন কয়েকজন অভিভাবক।
তবে ভর্তিচ্ছু-অভিভাবকদের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয় পুরো দেশের কথা বিবেচনা করে। কোনো একটি ব্যাচ সেখানে মূখ্য নয়।
তাছাড়া যখনই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তখনই কোনো না কোনো ব্যাচ এমন অভিযোগ করবে। তাই কেবলমাত্র একটি ব্যাচের কথা বিবেচনা করে পুরো জাতির স্বার্থে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তবে ভর্তিচ্ছু একাধিক শিক্ষক ও তাদের অভিভাবকের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি এমন ঘোষণা ভর্তি পরীক্ষার আগে দিত তাহলে তাদের প্রস্তুতি অন্যরকম হতে পারতো। কিন্তু এমন সময় সিদ্ধান্তটা জানাল যখন অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফরম তোলারও সুযোগও নেই।
পেশায় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির। তার মেয়ে হলিক্রস কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। কাজ ফেলে প্রখর রোদকে উপেক্ষা করে তিনিও এসেছেন মেয়ের সঙ্গে টিএসসি’তে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা অস্বীকার করছিনা যে ঢাবি কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। যেকোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একটু সময় নিতে হয়। হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।
তিনি বলেন, আমার মেয়ের স্বপ্ন সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়বে। এজন্য সে অন্যকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরমও তোলেনি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর সে প্রতিরাতে আমার কাছে এসে কেঁদে বলে, বাবা আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল। এখন আপনিই বলেন, বাবা হয়ে মেয়ের কান্না কিভাবে সহ্য করি।
তার দাবি অন্তত শেষবারের মত এ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিয়ে ২০১৬ সাল থেকে নতুন নিয়ম চালু করা হোক। তাতে এ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা যেমন বঞ্চিত হবেনা তেমনি পূর্ব-প্রস্তুতির যথেষ্ট সুযোগ পাবে পরের ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন ভর্তিচ্ছুরা। রোববার তারা পুনরায় টিএসসিতে জড়ো হওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাবি উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। আজ তাদের স্থানে আমি থাকলেও হয়তো একই কাজ করতাম। কিন্তু একটি ব্যাচের কথা চিন্তা করেতো প্রতি বছর কয়েকশ’ আসন খালি রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
ভিসির বক্তব্যেরে পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত তিন শিক্ষাবর্ষে প্রতি বছর চার শতাধিক সিট কেবল দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার কারণে ফাঁকা হয়ে যায়। অর্থাৎ এ সব শিক্ষার্থী ঢাবির কোনো বিভাগে ভর্তি হয়ে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে আবার অন্য বিভাগে চলে যায়। ফলে তাদের এ আসনগুলো ফাঁকাই থেকে যায়।
এক বিভাগে ভর্তি হয়ে পরের বার অন্য বিভাগে চলে যাওয়ায় ফাঁকা সিটসংখ্যা ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ৪২১টি, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ৪১৬টি এবং ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ৪২৯টি।
১৪ অক্টোবর, ভর্তি কমিটির সাধারণ সভায় ২০১৫ সাল থেকে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ভিসির সভাপতিত্বে ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন- সব ফ্যাকাল্টির ডিন, রেজিস্টার, প্রক্টর ও বিভাগীয় প্রধানরা।
**ভর্তিচ্ছুদের মিছিলে পুলিশের বাধা
**ঢাবিতে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার দাবিতে ভর্তিচ্ছুদের বিক্ষোভ
**ঢাবিতে ভর্তি: দ্বিতীয় বারেই সুযোগ পেয়েছে বেশি
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্ট, অক্টোবর ১৭, ২০১৪