জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি): জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগের এক পক্ষের ওপর অপর পক্ষের হামলার ঘটনায় বহিষ্কৃত ২৩ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ৯ লাখ ৫৬ হাজার ২৪০ টাকা জরিমানা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শনিবার রাতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ২৩ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও জরিমানার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানা যায়, গত ২০ আগস্ট বুধবার রাত ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল আহমেদ শাকিল গ্রুপের নেতাকর্মীদের ওপর সাধারণ সম্পাদক অনিন্দ বাড়ৈ গ্রুপের নেতাকর্মীরা হামলা করে। এ ঘটনায় ২২ আগস্ট শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ১৬ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদা আখতারকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শনিবার সিন্ডিকেট সভায় ২৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার ও ৯ লাখ ৫৬ হাজার ২৪০ টাকা জরিমানা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
হামলার ঘটনায় শাস্তিপ্রাপ্তরা শাখা সাধারণ সম্পাদক অনিন্দ বাড়ৈ পক্ষের নেতাকর্মী। তারা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি মাহমুদুর রহমানের অনুসারী।
হামলার শিকার ছাত্রলীগ কর্মীরা হল শাখা সভাপতি ফয়সাল আহমেদ শাকিলের পক্ষের নেতাকর্মী। তারা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদের অনুসারী।
আজীবন বহিষ্কৃত হওয়া ৫ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী হলেন, জাবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কে. এম নুরুন নবী, সহ-সম্পাদক ও রসায়ন বিভাগের ইসতিয়াক আহমেদ বিজয়, মওলানা ভাসানী হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের অনিন্দ বাড়ৈ, ছাত্রলীগ কর্মী ও ইতিহাস বিভাগের এখতে খায়রুজ্জামান সঞ্চয় ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের কিশোর দাশ।
দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত সাত ছাত্রলীগ কর্মী হলেন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের এম মইনুল হোসাইন, মার্কেটিং বিভাগের খোন্দকার নাঈম উল ইসলাম, মু. আদেল আল নোমান, মো. তানভীর আহমেদ, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের রাজ প্রশাদ, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সাদ্দাম হোসেন এবং পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের কাজী আব্দুল্লাহ তোহা।
এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত তিন ছাত্রলীগ কর্মী হলেন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিহাব খন্দকার, মার্কেটিং বিভাগের কাজী রায়হান হাবীব এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মো. নিশাত রহমান।
ছয় মাসের বহিষ্কৃত দুই ছাত্রলীগ কর্মী হলেন, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শান্ত কুমার নাথ, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শাকিল আহমেদ।
তিন মাসের বহিষ্কার হওয়া পাঁচ ছাত্র কর্মী হলেন, দর্শন বিভাগের দোলোয়ার জাহান ঝন্টু, মার্কেটিং বিভাগের অভিজিৎ কুমার সাহা, অথনীতি বিভাগের মো. এহসানুর রহমান, পাভেল রহমান এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের মো. আবদুল মোমিন।
এছাড়া জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদের (৩৭তম ব্যাচ, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ) স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সনদ প্রদান স্থগিত, সাময়িক সনদপত্র প্রত্যাহারের ব্যবস্থা ও ক্যাম্পাসে আজীবন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এদিকে শাস্তি পুনর্বিবেচনার দাবিতে রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান ও তার পক্ষের নেতা-কর্মীরা।
সাক্ষাৎ শেষে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে এ শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময় মারধরে শিকার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে এই হামলার ঘটনায় শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
শাস্তির মাত্রা বেশি হয়েছে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা শাস্তি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছি। একই সঙ্গে যে সব ঘটনার বিচার এখনো হয়নি সেগুলোর বিচার দাবি করেছি। ’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ বলেন, যারা হামলা করেছে তাদের বিচার হয়েছে। আমিও চাই অন্যান্য ঘটনাগুলোর বিচার হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে বিচার করা হয়েছে। অন্যান্য ঘটনাগুলোর তদন্ত কাজ শেষ হয়েছে। সেগুলোরও বিচার করা হবে। ’
** ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় জাবিতে ২৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৪