ঢাকা: প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও ঢাকা মহানগরীতে ১৭টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের ১০টিই এখনো চালু হয়নি। মামলা-জমির দখল পেতে দেরি হওয়াসহ নানা কারণে চারটি প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের লক্ষ্যে ২০১০ সালে ১৭টি স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার, যা স্বাধীনতার পর ঢাকা মহানগরে কোনো সরকারি স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রথম উদ্যোগ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০১০ সালে ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে 'ঢাকা মহানগরীতে ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬টি মহাবিদ্যালয় (সরকারি) স্থাপন' প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের মেয়দা ছিল ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত।
এক একর জমির ওপর ছয় তলা ভিতের চার তলা ভবনের প্রতিটি স্কুলের নির্মাণব্যয় ধরা হয় চার কোটি ৬১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। আর প্রতিটি কলেজ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় চার কোটি ৬৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
প্রকল্প কর্মকর্তারা বলেন, স্কুলগুলোতে প্রতি শিফটে ৫০০ জন করে এবং কলেজগুলোতে ৫০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে। প্রতিটি স্কুল-কলেজে সীমানাপ্রাচীর, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র-যন্ত্রপাতি, শিক্ষা উপকরণ, পাঠাগার, খেলাধুলার সামগ্রী থাকার কথা।
জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে স্কুল-কলেজগুলোতে থাকবে আধুনিক শিক্ষা সরঞ্জামাদি, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ইন্টার-অ্যাক্টিভ টাচবোর্ড। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে একটি করে প্রশস্ত খেলার মাঠ।
কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে সব স্কুল-কলেজ চালু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে তার ক্ষোভ জানান।
জটিলতায় তিনটি বিদ্যালয়:
মামলার কারণে ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়নি বড় মগবাজার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। জমিসংক্রান্ত মামলা চলছে উচ্চ আদালতে।
একই অবস্থা দারুস সালাম সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়েরও। ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে অভ্যন্তরীণ কাজ শুরুর পর মামলায় আটকে যায় এই কার্যক্রম।
উত্তরখান সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য নিচু জমি অধিগ্রহণ করে এখন পর্যন্ত কেবল বালু ভরাট করা ছাড়া আর কোনো কাজই হয়নি।
চালুর অপেক্ষায়:
আগামী বছরের জানুয়ারিতে চারটি স্কুলে ক্লাস শুরুর আশা করছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা।
এর মধ্যে কাফরুল ভাষানটেক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মোহাম্মদপুর কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে।
জুরাইন শেখ কামাল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনের কাজও শেষ। এখন অভ্যন্তরীণ কাজ চলছে।
আর কামরাঙ্গীরচরে শেখ জামাল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় একতলা ভবন তৈরি হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রীর এলাকায় হওয়ায় মন্ত্রী তা চালু করতে চান দ্রুত।
চালু হয়েছে চার স্কুল:
এ পর্যন্ত চালু হয়েছে চারটি স্কুল। এগুলো হলো হাজারীবাগের শহীদ শেখ রাসেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তরার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর রূপনগর (দুয়ারীপাড়া) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং ডেমরার হাজী এম এ গফুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।
দুয়ারীপাড়া-সবুজবাগ কলেজে মামলা:
মামলায় আটকে আছে পল্লবীর দুয়ারীপাড়া সরকারি মহাবিদ্যালয় ও সবুজবাগ সরকারি মহাবিদ্যালয়।
দুয়ারীপাড়া মহাবিদ্যালয় ফউন্ডেশনের কাজ শুরুর পরই জমিসংক্রান্ত মামলায় আটকে যায় কাজ।
সবুজবাগ মহাবিদ্যালয়ের জমি পাওয়া গেলেও দখলে আসেনি। উচ্চ আদালতে মামলা চলায় ভবনের নির্মাণকাজও শুরু করা যায়নি।
চালুর অপেক্ষায় ঢাকা উদ্যান কলেজ:
আগামী বছর জুলাইয়ে চালু হওয়ার কথা রয়েছে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান সরকারি মহাবিদ্যালয়। এই কলেজের তিন তলা ভবনের কাজ শেষ হয়েছে।
তিনটি কলেজে চলছে ক্লাস:
ছয়টি কলেজের মধ্যে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে হাজারীবাগের শহীদ বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয় চালু হয়েছে। চলতি বছর জুলাইয়ে চালু হয়েছে উত্তরার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি মহাবিদ্যালয় এবং ভাষানটেক সরকারি মহাবিদ্যালয়।
প্রকল্প ব্যয়:
শুরুতে ৪৩৫ কোটি টাকার বাজেট থাকলেও সংশোধিত আকারে তা ২৩০ কোটি ৭১ লাখ ১৫ হাজার টাকা করা হয়। কিছু জায়গা নামমাত্র মূল্যে পাওয়ার কারণে ব্যয় কমে যায়।
চলতি অর্থবছর ৬০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ বেতন-ভাতা বাবদ এবং বাকী ৫৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় হবে আসবাবপত্রসহ অভ্যন্তরীণ কাজে। প্রকল্পের মেয়াদের সঙ্গে ব্যয়ও বাড়বে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা।
যা বলছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা:
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও প্রকল্প পরিচালক মানিক চন্দ্র দে বাংলানিউজকে বলেন, জমি বুঝে পাওয়ার পর দ্রুত কাজ শুরু করায় সাতটি স্কুল-কলেজ চালু হয়েছে। কিন্তু মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় চারটির নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।
উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আদালতে নিষ্পত্তির পর জমি বুঝে পেলে প্রকৌশল বিভাগ ভবন নির্মাণ বাস্তবায়ন করবে।
প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বেড়েছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, আমরা প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব করে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছি।
এতে প্রকল্প ব্যয় বাড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা-মোকদ্দমার কারণে বাজেট একটু এদিক ওদিক হবে।
চালু হওয়া স্কুল-কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রমের সার্বিক মূল্যায়নের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এসবের মূল্যায়ন করে থাকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) । তবে আমরাও খোঁজ নিয়ে দেখেছি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৪