ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যাবে না। এমন ঘোষণা দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও।
প্রশ্ন : দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ ছিল; কিন্তু হঠাৎ কেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিল?
উপাচার্য : এ বছর ঘোষণা হলেও হঠাৎ করে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটি বিগত পাঁচ-সাত বছরের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে কয়েক বছর ধরে আলোচনা ও বৈঠকের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রশ্ন : কেন এ সিদ্ধান্ত?
উপাচার্য : প্রথমবার যেসব ভর্তিপ্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়, দ্বিতীয়বারের প্রার্থীদের তুলনায় তারা অনেক অনেক কম সময় পায়, কারণ তারা এইচএসসি পরীক্ষার পর মাত্র কয়েক মাস প্রস্তুতি নেয়। অন্যদিকে গত বছরের প্রার্থীরা প্রায় এক বছর সময় পায়।
প্রশ্ন : এতে প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য প্রার্থীরা কি বঞ্চিত হচ্ছে না?
উপাচার্য : না, একদমই বঞ্চিত হচ্ছে না। বরং সময়ের ব্যবধান হওয়ায় প্রস্তুতি তথা ফলাফলে যে বৈষম্য হচ্ছে সেটি দূর করার জন্যই এ উদ্যোগ।
প্রশ্ন : দ্বিতীয়বার ভর্তীচ্ছুদের জন্য এটা কি কঠিন হয়ে গেল বলে আপনি মনে করেন?
উপাচার্য : এটা তাদের জন্য সার্বিক মঙ্গল বয়ে আনবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। দ্বিতীয়বার সুযোগ থাকায় প্রথমবার পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ছাত্রছাত্রীদের গাফিলতি দেখা যায়। এ দায়সারা মনোভাব তাদের পরবর্তী শিক্ষাজীবনেও প্রভাব ফেলে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আরো সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। সুযোগ একবারই আসে এবং তাকে কাজে লাগাতে না পারলে তার ফল নিজেকেই ভোগ করতে হবে। লক্ষ্যে পৌঁছানোর ট্রেন ধরতে ব্যর্থ হলে বাসে, নৌপথে অথবা ভিন্ন উপায়ে তাকে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে।
প্রশ্ন : প্রথমবার আশানুরূপ বিষয়ে ভর্তি হতে না পারলে তাদের কী আরেকবার সুযোগ দেওয়া যায় না, যাতে আরো ভালো একটি বিষয়ে অধ্যয়ন করার সুযোগ পায়?
উপাচার্য : কোনো শিক্ষার্থী প্রথমবার পছন্দসই বিষয়ে ভর্তি হতে না পারলে ভর্তিকৃত বিষয়ের প্রতি অমনোযোগী হয়ে আবার ভর্তি পরীক্ষায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। এতে একদিকে যেমন নিজে নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণ করে না অন্যদিকে সহপাঠীদেরও সে বিষয় সম্পর্কে নিরুৎসাহী করে তোলে। যার নেতিবাচক প্রভাব সুদূরপ্রসারী। ফলে যে শিক্ষার্থীর আবার ভর্তির ইচ্ছা নেই, সেও ওই বিষয়ের প্রতি অনাগ্রহী হয়ে পড়ে। অনেক সময় দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয়বারেও সে ভর্তির সুযোগ পায় না; প্রথমবারে প্রাপ্ত বিভাগেই তাকে পড়তে হয়।
প্রশ্ন : কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীই তো দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে ভর্তির সুযোগ পায়।
উপাচার্য : নিশ্চয়ই পায়। সুযোগ পাক আর না পাক সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকে তা ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে প্রতি বছর হাজার হাজার 'মেধাবর্ষ' নষ্ট হয়। অনেকে প্রথম বছরে সুযোগ পেয়েও ওই বিষয়টি ছেড়ে দ্বিতীয়বার অন্য বিষয়ে পড়তে শুরু করে। ফলে প্রথম বছরটি তার নষ্ট হয়। এভাবে প্রতি বছর হাজার হাজার মেধাবর্ষের অপচয় ঘটে। অন্যদিকে নতুন সিদ্ধান্তে এমনটি হওয়ার সুযোগ নেই। এখন শিক্ষার্থীদের প্রতিটি মেধাবর্ষই হবে জাতীয় সম্পদ।
প্রশ্ন : সেই অর্থে তো এ বছরের অকৃতকার্যরা বঞ্চিত হয়েছে। কারণ গত বছরের শিক্ষার্থীদের দ্বারা প্রায় অর্ধেক আসনই দখল হয়ে গেছে-
উপাচার্য : তারা তো এ বছর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। আমরা কোনো শিক্ষার্থীকে বঞ্চিত করতে চাই না বলেই এ বছরের ভর্তি পরীক্ষায় পর পরই এ ঘোষণা দিয়েছি যাতে তারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের মেধার স্বাক্ষর রাখতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে। এ ছাড়া পরবর্তী ব্যাচের এইচএসসি পরীক্ষার এখনও বেশ কয়েক মাস বাকি।
প্রশ্ন : দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় দাবিতে অনেকেই আন্দোলন করছে। আন্দোলনের মুখে আপনাদের সিদ্ধান্তে কি পরিবর্তন আসতে পারে?
উপাচার্য : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সেই বছরের পাসকৃত ছাত্রছাত্রীই কেবল অংশ নিতে পারবে, এই সিদ্ধান্তে আমরা অনড়। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই।
মোহসিনা হোসাইন, গণমাধ্যমকর্মী ও গবেষক