ঢাকা: পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণের পরও ফাঁস রোধে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার না করে সনাতন পদ্ধতিতেই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও বিতরণ করে শেষ হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার আয়োজন।
আগামী রোববার ২৩ নভেম্বর থেকে সারা দেশে একযোগে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।
চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক ও গত বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর গঠিত তদন্ত কমিটি প্রশ্ন তৈরি ও বিতরণে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণের সুপারিশ করে।
গত বছরের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তদন্তে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এস এম আশরাফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়।
প্রাথমিক সমাপনীর বাংলা বিষয়ের ৫৩ শতাংশ এবং ইংরেজির ৮০ শতাংশ প্রশ্ন ফাঁস হয় বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়। তবে পরীক্ষা দু’টি বাতিল করা হয়নি।
তদন্ত প্রতিবেদনে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে ‘আমুল’ পরিবর্তনের সুপারিশ করে বিজি প্রেসের কাগজ শনাক্ত করার জন্য সফটওয়ার ব্যবহার করতে বলা হয়।
এছাড়া চলতি বছরের এইচএসসির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও সরবরাহের সুপারিশ করে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে ঢাকা বোর্ডের গণিত দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষাও স্থগিত করে নতুনভাবে নেওয়া হয়।
গত ২ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কমিটির প্রতিবেদন তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং একটি ‘প্রশ্নব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করে এ পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড, বায়োমেট্রিক্স ও ইউজার একসেস কার্ড- এ তিন স্তরের নিরাপত্তার সুপারিশ করে কমিটি।
প্রযুক্তির ব্যবহার করেই প্রশ্নব্যাংক থেকে পরীক্ষা শুরুর আগে যথাসময়ে প্রশ্নপত্র ছাপানো, বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র পাঠানোর পর প্রযুক্তির ব্যবহার করে তা কেন্দ্রে খোলার সুপারিশ করা হয়।
বর্তমানে প্রশ্নপত্র বিজি প্রেসে ছাপানোর পর সিলগালা করে ন্যাশনাল একাডেমি ফর প্রাইমারি এডুকেশনের (ন্যাপ) কর্মকর্তার উপস্থিতিতে প্যাকেটজাত ও গণনা করে নিরপত্তাকর্মী দিয়ে জেলাওয়ারি পাঠানো হয়। এরপর জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজ জেলার ট্রেজারিতে তা সংরক্ষণ করেন। জেলা কমিটি উপজেলায় পাঠানোর পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিলগালাযুক্ত প্রশ্নপত্র সোনালী ব্যাংক বা থানায় সংরক্ষণ করেন। জেলার ক্ষেত্রে প্রতি কেন্দ্রে একজন করে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা এবং মহানগরের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় এসব প্রশ্নপত্র।
গত ১৬ অক্টোবর গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন সংক্রান্ত এক বৈঠকে জানানো হয়, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, প্রিন্টিং বিভ্রাট, প্রশ্নপত্রের মান, অনলাইনে প্রশ্নপত্র ফাঁসের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এজন্য আরো আলোচনা করে পরবর্তীতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও বিতরণের কথা বলা হয়।
সভায় সারা দেশে আগামীতে একদিনে পরীক্ষা না নিয়ে পর্যায়ক্রমে বিভাগভিত্তিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সুপারিশ করা হয়।
প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি পরীক্ষায় এবার সারা দেশে অংশ নিচ্ছে প্রায় ৩১ লাখ শিক্ষার্থী।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বুধবার (১৯ নভেম্বর) বাংলানিউজকে বলেন, এতো বিশাল সংখ্যাক শিক্ষার্থীর জন্য প্রশ্নপত্র ছাপা ও পৌঁছানো বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ ও পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে এবার প্রযুক্তির ব্যবহার পুরোপুরি করা না গেলেও মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব।
আগামীতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও বিতরণ করা হবে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির প্রধান জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৪