ইবি (কুষ্টিয়া): ২২ নভেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের সীমান্তবর্তী শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরের ছায়াঢাকা বিস্তীর্ণ প্রান্তরের মনোরম পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পর স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় এটি। যাত্রা শুরুর পর থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উচ্চশিক্ষার আলোক বর্তিকা হিসেবে ভূমিকা বিশ্ববিদ্যালয়টি।
২২ নভেম্বর (শনিবার) ৩৬তম বছরে পদার্পণ করবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ ৩৫ বছরের পথচলায় উচ্চশিক্ষার দীপ্ত মশাল ছড়িয়ে দিয়েছে দেশের সব প্রান্তে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস:
বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ১৯৭৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এ বারীকে সভাপতি করে সাত সদস্য বিশিষ্ট ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা কমিটি গঠন করা হয়। পরিকল্পনা কমিটি ৩টি অনুষদ, ১৮টি বিভাগ, ৩টি ইনস্টিটিউট ও একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন।
শুরুতে এটি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতার কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। ১৯৭৭ সালে ওআইসি’র আন্তর্জাতিক ইসলামী শিক্ষা সম্মেলনে বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। বৃহত্তর যশোর ও কুষ্টিয়ার (বর্তমানে ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া) মধ্যবর্তী সীমান্তে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।
পরে, ১৯৮৩ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এক বিশেষ আদেশে নির্মাণাধীন এ বিশ্ববিদ্যালয়কে গাজীপুরের বোর্ডবাজারে স্থানান্তর করেন। পরে ১৯৯২ সালের ২১ নভেম্বর আবারো বর্তমান ক্যম্পাসে যাত্রা শুরু করে এ বিশ্ববিদ্যালয়।
একাডেমিক কার্যক্রম:
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫টি অনুষদ, ২২টি বিভাগ, একটি ইনস্টিটিউট এবং ১টি স্কুল রয়েছে। রয়েছে প্রায় সাড়ে বার হাজার শিক্ষার্থী, ৪শ শিক্ষক, সাড়ে ৩শ কর্মকর্তা, এবং ৬শ কর্মচারী। এছাড়া দেশের ১৪০০ ফাজিল-কামিল মাদ্রাসা পরিচালিত হচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।
আয়তন ও অবকাঠামো:
১৭৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২টি প্রশাসনিক ভবন, ১০ শয্যা বিশিষ্ট একটি চিকিৎসাকেন্দ্র, একটি আধুনিক ডাকঘর, দেশের ৩য় বৃহত্তম মসজিদ, একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক মিলনায়তনসহ ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (টিএসসিসি), আধুনিক সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক কোয়ার্টার রয়েছে।
স্মৃতিস্তম্ভের মধ্যে রয়েছে- জাতীয় শহীদ মিনারের আদলে ক্যাম্পাস ভিত্তিক সর্ববৃহৎ ও দেশের ২য় বৃহত্তম শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় উজ্জীবিত মুক্তবাংলা এবং স্মৃতিসৌধ।
আবাসিক হলগুলোর মধ্যে ছেলেদের জন্য রয়েছে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, সাদ্দাম হোসেন হল, লালন শাহ হল এবং শহীদ জিয়াউর রহমান হল। মেয়েদের হলগুলো হলো- বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল, শেখ হাসিনা হল এবং খালেদা জিয়া হল। হলে প্রাপ্ত আবাসিক সুবিধা শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এটি একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪ ভাগ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সব থেকে বেশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আলাউদ্দিনের সময়। তার সময়ে নতুন একটি আবাসিক ছাত্রী হল, দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবন, ওয়াজেদ আলী বিজ্ঞান ভবন, শহীদ মিনার ও একটি শিক্ষক কোয়ার্টারের কাজ শুরু হয়। এর কোনোটির কাজ তিনি শেষ করে গেছেন আবার কোনটি শেষ হওয়ার আগেই মেয়াদ শেষ করেছেন।
প্রযুক্তি সুবিধা: অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল এবং অনুষদগুলোকে ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি সমৃদ্ধ কম্পিউটার সেন্টার। এছাড়া প্রতি বিভাগের কম্পিউটার ল্যাবতো আছেই। কলা অনুষদের কয়েকটি বিভাগ ছাড়া সবক’টি বিভাগে রয়েছে আধুনিক মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। এছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষার রুম সমূহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ব্যবস্থাপনা, ইংরেজী, আইসিই সহ কয়েকটি বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে।
যেসব ডিগ্রি দেওয়া হয়:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রদত্ত ডিগ্রির মধ্যে রয়েছে- অনার্স: বিএ, বিটিআইএস, বিবিএ, বিবিএস, এলএলবি, বিএসএস, বিএসসি, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং।
মাস্টার ডিগ্রি: এমএ, এমটিআইএস, এমবিএস, এমবিএ, এমএসএস, এলএলএম, এমএসসি, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং।
উচ্চতর ডিগ্রী: এমফিল, পিএইচডি।
উপাচার্যের দায়িত্ব পালন:
বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে ড. এ এন এ মমতাজ উদ্দিন চৌধুরীকে উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ১১জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক ড. এম আলাউদ্দিন এবং বর্তমানে ১২ তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার।
প্রকৃতিক সৌন্দর্য :
অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মনে হয় প্রকৃতি যেন গভীর মিতালি করেছে এ ক্যাম্পাসের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বর, আম বাগান, কাঁঠাল বাগান, আমলকি বাগান, মেহগনি বাগান, বোটানিকাল গার্ডেন, লিচু বাগান, বঙ্গবন্ধু লেক, মফিজ লেক এক একটা স্থান যেন এক একটা পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ ক্যাম্পাসটি দেখতে আসেন হাজারো সৌন্দর্যপ্রেমী।
দেশের জ্ঞান পিপাসু মানুষের অন্তরে আলোর দিশারী হয়ে চিরকাল স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে থাকবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। যুগ যুগান্তরে গড়ে তুলবে আধুনিক বিশ্ব পরিচালনায় যোগ্য, মেধাবী, সৎ ও কর্মঠ মানব সম্পদ। জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালনোর মধ্য দিয়ে অন্তরের কলুষতা দূর করে অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রাচীর দুর্গ গড়ে তুলবে দেশ থেকে দেশান্তরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময় ০০১৫ ঘণ্টা, ২২ নভেম্বর ২০১৪