ঢাকা: ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুর অন্তরে’। সঠিক দিকনিদের্শনা থাকলে আজকের শিশুটিই পারে আগামীতে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে।
প্রতি বছরের মতো প্রিমিয়াম স্কুলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা এবারও ছোট ছোট উপকরণ দিয়ে উদ্ভাবন করেছে ফরমালিন টেস্ট, লেজার সিকিউরিটি সিস্টেম, রক্তচাপ মাপার যন্ত্রসহ অবাক করা সব যন্ত্র।
এ উপলক্ষে উত্তরার গরিবে নেওয়াজ রোডের প্রিমিয়াম স্কুল ভবনে শনিবার এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনীতে নিজেদের উদ্ভাবন করা যন্ত্র প্রদর্শন করেছে নার্সারি থেকে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা।
শুরুতে নার্সারি শিশুদের কমলা লেবুর খোসার তৈরি মোমবাতি দিয়ে স্বাগত জানানো হলো দশর্নাথীদের। মোমবাতিটি কীভাবে তারা তৈরি করেছে, সেটাও উপস্থাপনের মাধ্যমে দেখিয়ে দিচ্ছে গ্রুপের চার শিক্ষার্থী।
ঘুরে ফিরে দেখতে গিয়ে চোখে পড়লো সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রীদের তৈরি করা একটি ছোট যন্ত্রে। এই যন্ত্র দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের সাহায্যে একটি বাল্বও জ্বলছে।
যন্ত্রটি সম্পর্কে তথ্য জানালো শিক্ষার্থী আনিশা। সে জানায়, হাইড্রোলিক প্রেসারের সঙ্গে মোটর দিয়ে এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে; যা ভবিষ্যতে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
অবাক হতে হলো যখন দেখা গেল, ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রীরা একটি দ্রবণ তৈরি সক্ষম হয়েছে, যা দিয়ে খুব সহজেই ফরমালিন পরীক্ষা করা সম্ভব। এ পদ্ধতির মাধ্যমে বাড়িতে বসেই খাদ্যে ফরমালিন আছে কিনা তা যে কেউ জানতে পারবেন।
পদ্ধতি সম্পর্কে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানালেন, ফরমালিন মিশ্রিত কোনো খাদ্যদ্রব্য ধোয়া পানিতে এই দ্রবণের এক ফোঁটা মেশাতে হয়। এরপর এক থেকে দুই সেকেন্ডের মধ্যে যদি পানি ঘোলাটে হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে এই খাদ্যে ফরমালিন আছে।
তিনি জানান, সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে এই (টেস্ট দ্রবণ) দ্রবণের মূল্য ২৫০ টাকা হলেও আমাদের শিক্ষার্থীদের এই পদ্ধতির মাধ্যমে খরচ হবে মাত্র ১০ টাকা।
এরপাশেই দেখানো হচ্ছে, কৃত্রিম বৃষ্টির পদ্ধতি। কীভাবে কৃত্রিম বৃষ্টি হবে জানতে চাইলে স্ট্যান্ডার্ড টুর (দ্বিতীয় শ্রেণী) ছাত্রী ফাইজা জানায়, এ পদ্ধতিতে এন্ট্রি-ফগের মাধ্যমে মেঘের কণাগুলোকে ভারী করা হয়। ফলে, ভারী কণাগুলো কৃত্রিম বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে।
ফাইজা এই পদ্ধতির সুবিধা বর্ণনা করে জানালো, কৃষিপ্রধান আমাদের দেশে অনেক সময় পানির খুব দরকার পড়ে। পানির সংকটের সময় হেলিকপ্টার দিয়ে কৃত্রিম বৃষ্টি হলে কৃষকেরা কৃষিকাজে উপকৃত হবেন।
ছাত্রীদের পাশাপাশি ছোট ছোট ছাত্ররাও উদ্ভাবন করেছে লেজার সিকিউরিটি সিস্টেম। এ পদ্ধতিতে একটি লেজার লাইট তৈরি করে আয়নার সাহায্যে স্থাপন করা হয়। যদি কেউ অপরাধ ঘটাতে এ এলাকায় আসে, তাহলে তাকে লেজার লাইট পার করতে হবে। আর লাইট পার করলেই সাংকেতিক ঘণ্টা বেজে উঠবে।
এছাড়াও শিক্ষার্থীরা নারকেল, সোডা ও পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরি করেছে টুথপেস্ট। স্যালাইনের পাইপ দিয়ে প্রেসার মাপার যন্ত্রসহ নানাবিধ উপকরণ; যা দেখে সত্যিই মুগ্ধ হওয়ার মতো।
প্রিমিয়ার স্কুলের শিক্ষক রোকসানা জান্নাত স্নিগ্ধা জানালেন, ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটিতে বতর্মানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৫০ জন। এদের দেখভালের জন্য রয়েছেন ৪০ জন শিক্ষক।
তিনি জানান, এবারের প্রদশর্নীতে মোট ৩০টি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞানমনস্ক করার জন্য প্রতিবছর এই ধরনের প্রদশর্নীর আয়োজন করা হয়।
তিনি আরো বলেন, পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি শিশুদের প্রতিভা বিকাশের জন্য আমাদের এই উদ্যোগ। যথোপযুক্ত দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই আমরা পেতে পারি, একটি সুন্দর প্রজন্ম। কারণ আজকের শিশুই তো আগামীর ভবিষ্যত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৪