ঢাকা: ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থীর হাতে সরকারিভাবে বিনামূল্যে ৩৩ কোটি বই তুলে দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ে এসব বই পৌঁছে দিতে পুরোদমে চলছে বই ছাপানোর কাজ।
এদিকে শিক্ষার্থীদের হাতে নির্দিষ্ট সময়ে বই তুলে দেওয়ার জন্য ছাপাখানাগুলোর ওপর সরকারের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠপুস্তক বোর্ড, ইন্সপেকশন টিমসহ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ কমিটি নিয়মিত ছাপাখানাগুলো পরিদর্শন করছে।
আগস্ট মাস থেকে শুরু হওয়া পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজ ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা হচ্ছে ছাপাখানা। সময়ের বাধ্যবাধকতার কথা মাথায় রেখে স্বাভাবিকের চেয়ে দেড়গুণ বেশি সময় ব্যয় করছে ছাপাখানার কর্মীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজে ব্যাপক ব্যস্ত ছাপাখানাগুলো। সেই সাথে চলছে বই বাঁধাই এবং সরবরাহ। ছাপাখানা থেকে বই ছেপে বের হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কাটিং করে বাঁধাই মেশিনে বাঁধাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গুদামে। সেখান থেকে গুণে গুণে ট্রাকে তুলে সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন উপজেলায়।
ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোণা, সিলেট, রংপুর, কিশোরগঞ্জে বই সরবরাহে ব্যস্ত মাতুয়াইলের আনন্দ প্রিন্টার্স। ছাপাখানায় গিয়ে কথা হয় প্রিন্টার্সের ব্যবস্থাপক এস এম ওয়ালিউল্লাহর সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, এ বছর তিন কোটি পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজ পেয়েছে তারা। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ ছাপানোর কাজ শেষ। বই ছাপানোর পরদিনই সেখান থেকে নির্ধারিত উপজেলায় নিজস্ব পরিবহনে বই সরবরাহ করা হচ্ছে। বাকি কাজও নির্দিষ্ট সময়েরে মধ্যে শেষ হবেও বলে তিনি জানান।
ওয়ালিউল্লাহ আরও জানান, গত বছরে হরতালের মধ্যেই সময়মতোই বই পৌঁছে দিতে পেরেছি। আর এবার পরিস্থিতি যেহেতু স্বাভাবিক তাই কাজ শেষ করে সঠিক সময়েই বই পৌঁছে দিতে পারবো।
সোয়া চার কোটি পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজ পাওয়া ব্রাইট প্রিন্টার্সের ব্যবস্থাপক আব্দুল কাইয়ূম বাংলানিউজকে জানান, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, চাঁদপুর ফেনী, সিলেটসহ বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে ৮৫ শতাংশ বই ছাপিয়ে সরবরাহ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে বাকি কাজও হয়ে যাবে।
মৌসুমী প্রিন্টার্সের ব্যবস্থাপক লিটন বাংলানিউজকে জানান, এ বছর এখান থেকে প্রায় চার কোটি বই সরববাহ করা হবে। ইতিমধ্যে সোয়া তিন কোটি বই দেশের বিভিন্ন উপজেলায় সরবরাহ করা হয়েছে।
সরকারের নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বই সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন নিউ পানামা প্রিন্টার্স, বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রিন্টার্স, গ্লোবাল প্রিন্টার্সসহ পাঠ্যপুস্তক ছাপানোতে ব্যস্ত বেশ কয়েকটি প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান। এ বছর প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের কড়া নজরদারি রয়েছে বলেও জানায় তারা।
প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি করে, এনসিটিবির বই ছাপানোর জন্য বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণ প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান আছে। এজন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান না করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা।
এ বছর ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩ পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় ইতোমধ্যে ২৪ কোটি ৫৮ লাখ পাঠ্যপুস্তক সর্বরাহ করা হয়েছে বলেও বাংলানিউজকে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বিতরণ বিভাগের নিয়ন্ত্রক মোস্তাক আহমেদ ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই সব উপজেলায় বই পৌঁছে যাবে। যেখানে বই ছাপা-বাঁধাইয়ের কাজ হচ্ছে সেসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত তদারকি করছেন এনসিটিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিগত বছরের মতো এবারও ১ জানুয়ারি সারা দেশে পাঠ্যপুস্তক উৎসব করা হবে।
২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রায় ১৯ কোটি বই বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম বই উৎসব। পরের চার বছরে একই সময়ে বিতরণ করা হয় আরও একশ‘ ৩ কোটি বই। আগামী ১ জানুয়ারিতেও শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে প্রায় ৩৩ কোটি নতুন বই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২১০৪