ঢাকা: দেশে শিক্ষার হারে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। কি প্রাথমিক, কি মাধ্যমিকে।
সেকায়েপ পরিচালিত জরিপে বলা হয়েছে, প্রাথমিক পাঠে ছাত্রীদের সংখ্যা ৫১ শতাংশ। ছাত্র সংখ্যা ৪৯ শতাংশ। মাধ্যমিকে ছাত্রীদের সংখ্যা ৫৩ শতাংশ এবং ছাত্রদের সংখ্যা ৪৭ শতাংশ।
নারীসমাজ আজ অনেক ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কি রাজনীতি, শিক্ষাদীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, খেলাধূলা থেকে শুরু করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরা অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মিত পাঠ্যবই ছাড়াও কারিকুলাম বহির্ভূত বই পাঠেও এবার এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের ছাত্রীরা। দেশে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে এ তথ্য মিলেছে।
‘সেকায়েপ’ মেয়েদের এ সাফল্যের তথ্য জানিয়েছে।
স্বাধীনতা পূর্ব অর্থাৎ সত্তুর দশকের আগে বাংলাদেশের জেলা, মহকুমা, থানা এমনকি গ্রামের পাড়া-মহল্লায় ছিল বিস্তর পাঠাগার। বিকেলে খেলাধূলা হতো জমজমাটভাবে। কিন্তু পরীক্ষা শেষে বা উৎসব পর্বে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলে দুপুর বেলাটা কি করে কাটানো যায়? সব সময় তো বই নিয়ে একঘেয়েমীতে থাকা যায় না।
সেজন্যই বাংলাদেশের সব খানেই ছিল পাঠাগার। ছেলেরা পাঠাগারে গিয়ে বই পড়লেও মেয়েদের চলাচল এখনকার মতো এতো স্বাধীনতা ছিল না। তাই বাড়িতে বই আনা হতো। বই বাড়িতে আনতে হলে মাসিক একটা নির্দ্দিষ্ট পরিমাণ চার আনা, ছয় আনা বা আট আনা চাঁদা দিতে হতো।
এখন এটা ভাবাই যায় না। পাঠকের অভাবে সিংহভাগ পাঠাগার অস্তিত্ব হারিয়েছে। নভেল-নাটক, গল্প, উপন্যাস এখন আর পারতপক্ষে কেউ কিনতে চায় না। ‘৭৫ পরবর্তীতে ছাত্রদের হাতে বইয়ের পরিবর্তে স্থান পায় অস্ত্র। শুরু হয় চাঁদাবাজি।
সেকেন্ডারি অ্যাডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড একসেস এনফোর্সমেন্ট প্রজেক্ট- ‘সেকায়েপ’ দেশের প্রত্যন্ত এলাকার পিছিয়ে থাকা গরীব পরিবারের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষিত করে স্বাবলম্বী হতে ২০০৮ সালে কাজ শুরু করে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষে একসেস বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। এ কর্মসূচিতে বিশ্ব ব্যাংক ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। এরফলে প্রতিবছর ৪৫ লাখ গরীব পরিবারের ছেলে-মেয়েরা মাধ্যমিক শিক্ষালাভ করবে।
একই কর্মসূচির আওতায় স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের মননশীলতা বৃদ্ধিতে ২০১০ সালে কারিকুলাম বহির্ভূত বই পাঠেও বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি মনীষীদের জীবন কাহিনী, নভেল, নাটক, উপন্যাস, কবিতা, সায়েন্স ফিকশন, ভ্রমণ, বিজ্ঞান বই পড়তে জোর দেওয়া হয়। যাতে করে তারা পারিপার্শ্বিক বিষয়েও জ্ঞানলাভ করতে পারে।
কারিকুলাম বহির্ভূত বইপাঠ কর্মসূচিতে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার চারশ’ কোটি টাকা। এরমধ্যে বিশ্বব্যাংক ৮০ শতাংশ ও ২০ শতাংশ বাংলাদেশ সরকার ব্যয় বহন করছে।
চলতি বছর (২০১৪) দেশের ১২৫টি উপজেলার ৬ হাজার ৬৮০টি স্কুলে ১২ লাখ বিভিন্ন ধরনের বই সরবরাহ করা হয়। তাদের মধ্যে ৮ লাখ ১০ হাজার স্কুল ছাত্র-ছাত্রী কারিকুলাম বহির্ভূত বই পাঠ করেছে। এরমধ্যে ৫৮ শতাংশ হচ্ছে ছাত্রী।
কারিকুলাম বহির্ভূত বই পাঠ গ্রহণকারীরা কেমন শিক্ষালাভ করেছে এর উপর তাদের আবার পরীক্ষা নেওয়া হয়। ৮ লাখ ১০ হাজার স্কুল ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ৬লাখ ৩৪ হাজার শিক্ষার্থী ভাল ফল করে পুরস্কার লাভ করেছে। পুরস্কার লাভকারীদের উৎসাহিত করতে তাদের মধ্যে আরও প্রায় ১২ লাখ টাকার বিবিধ বই উপহার দেওয়া হয়।
শিক্ষা সচিব মুহম্মদ নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে জানান, শুধু ছাত্র-ছাত্রী নয়- দেশের মানুষের মধ্যে পাঠ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে সব বইকে ই-বুক এ (ইলেকট্রনিক বই) পরিণত করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এজন্য কাজ করে যাচ্ছে।
কেননা বই ছেপে বিতরণ করা ব্যয় ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এজন্য সহজ পথ হচ্ছে ই-বুক এ (ইলেকট্রনিক বই) পরিণত করা। ঘরে বসে অনলাইনে বই পড়ে নেওয়া যাবে।
সেকেন্ডারি অ্যাডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড একসেস এনফোর্সমেন্ট প্রজেক্ট- সেকায়েপ-এর প্রকল্প পরিচালক মুহম্মদ শহীদ বকতিয়ার আলম তাঁর কার্যালয়ে বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, দেশে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কারিকুলাম বহির্ভূত বই পাঠ্যাভাসে সন্তোষ প্রকাশ করে বলে বলেন, এ লক্ষ্য বৃদ্ধিতে পূর্ববর্তী জনবল ৮০ থেকে বাড়িয়ে ১৩৭-এ করা হবে।
বর্তমানে দেশের ১২৫টি উপজেলার এ কার্যক্রম চলছে। ২০১৫ সালে এরও সংখ্যা বাড়িয়ে ২১৫ করা হবে। অর্থাৎ আরও ৯০টি উপজেলা এ কার্যক্রমের আওতায় আনা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৪