ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

দুর্নীতির ফাইল হাওয়া

‘ভারমুক্ত’ হওয়ার চেষ্টায় কারিগরি বোর্ড চেয়ারম্যান!

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৪
‘ভারমুক্ত’ হওয়ার চেষ্টায় কারিগরি বোর্ড চেয়ারম্যান!

ঢাকা: দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তদন্তের নির্দেশের মধ্যে থাকা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল হক তালুকদার এবার ভারমুক্ত হয়ে পূর্ণ চেয়ারম্যান হওয়ার চেষ্টা-তদবির চালাচ্ছেন।

আব্দুল হকের বিরুদ্ধে নিয়োগ, পদোন্নতি, টেন্ডারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জরুরি ভিত্তিতে তদন্তের নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।



সম্প্রতি রাজধানীর দক্ষিণ পীরেরবাগের মো. শামসুজ্জামান প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবদুল হকের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও বিধিবর্হিভূত কর্মকাণ্ডের লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের দুর্নীতিতে রেকর্ড সৃষ্টি করে চলছেন বোর্ডের সচিব ও বর্তমানে চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তা আবদুল হক। ওই চিঠিতে আবদুল হককে জরুরি ভিত্তিতে ওএসডি করে কারিগরি শিক্ষাকে রক্ষার আবেদন জানানো হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ নভেম্বর শিক্ষাসচিব বরাবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঠানো চিঠিতে আব্দুল হকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে বিধি মোতাবেক নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

কিন্তু বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই চিঠির বিষয়ে কোন অগ্রগতি পাওয়া যায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (কারিগরি) রোকসানা মালেক বাংলানিউজকে জানান, এ বিষয়ে কোনো চিঠি তারা পাননি।

আব্দুল হকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার‌্যালয়ের চিঠির বিষয়ে মন্তব্য করেন নি শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খানও।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং কারিগরি বোর্ড সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আবদুল হক এবার পূর্ণ চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য ধরণা দিচ্ছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে।

আবদুল হক তালুকদার নিয়মের বাইরে সাড়ে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি সচিব পদে রয়েছেন। গত আগস্টে চেয়ারম্যানের পদ শুন্য হলে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পান।

অভিযোগ মতে, দীর্ঘসময় এ বোর্ডে থাকার সুবাদে তিনি জড়িয়ে পড়েছেন নানাবিধ দুর্নীতি-অপকর্মে। তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ও মেডিকেল ইন্সটিটিউটের উদ্যোক্তা-কর্তাব্যক্তিরা।

বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ৫ এপ্রিল বিভিন্ন পদে ১১ জনকে বোর্ডে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগ নিয়ে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠলেও তার কোনো তদন্ত করা হয়নি। এর আগে ২০১০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ৩৩ জনকে বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

এই ৩৩ জনের মধ্য থেকে সংবাদপত্রে কোনো রকম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়াই মো. ফারুক নামের একজন ডেসপাস রাইটারকে সরাসরি রাজস্ব খাতে নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুসারে, উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়া সরাসরি কাউকে রাজস্বভুক্ত কোনো পদে নিয়োগ দেওয়া যায় না।

এদিকে এসএসসি পাস একজন পদোন্নতি পেয়ে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হয়েছেন। একজন ডকুমেন্টেশন অফিসার ৮ হাজার টাকা স্কেলে চাকরি করতেন তাকে ২০১০ সালের ১৩ জানুয়ারি এক আদেশে সরকারি বেতন স্কেলের কয়েকটি ধাপ ডিঙিয়ে তাকে উপ-পরিদর্শক হিসেবে ২২ হাজার ১৫০ টাকার স্কেলে পদোন্নতি দেয়া হয়।

একইভাবে এসএসসি পাস এক নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে ওই একই আদেশে ১১ হাজার টাকার স্কেলে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদোন্নতি দেয়া হয়। শুধু নিয়োগ-পদোন্নতিই নয়, অভিযোগ রয়েছে, নিম্নমানের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও অনুমোদন দেয়ার সুপারিশ করার।

এদিকে, কারিগরি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুল হক তালুকদার টেলিফোন আলাপকালে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি চিঠির কথা শুনেছেন বলে জানালেও কোনো মন্তব্য করতে চাননি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৪

** কারিগরি বোর্ড চেয়ারম্যানের দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।