খুলনা: পুব আকাশে সূর্যের উদয়ন আর পশ্চিম আকাশে সূর্যের অস্তগমন। এভাবেই রাত ও দিনের পালা বদলের ফলে আবারও আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিচ্ছে একটি বছর।
নতুনের প্রতি সব সময়ই মানুষের থাকে বিশেষ আগ্রহ ও উদ্দীপনা। কেননা নতুনের মধ্যে নিহিত থাকে অমিত সম্ভাবনা। আর সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়ন করার সুযোগ করে দিতেই নতুন বছরের আগমন। পুরনো বছরের গ্লানি, ব্যর্থতা ও অপারগতাকে ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরে নতুন আশা ও কর্মউদ্দীপনা নিয়ে জেগে উঠবে মানুষ। তাই পুরনো বছরের গ্লানি, ব্যর্থতা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে নতুনকে আবাহন করার কথা বলেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
সারা বছর ক্লাস, পরীক্ষা, লাইব্রেরি আর পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকা শিক্ষার্থীদের নতুন বছর নিয়ে প্রত্যাশা একটু বিচিত্র ধরনের। তারা ভাবনার ছকে আঁকেন আগামীর পরিকল্পনা। তাতে থাকে আকাশছোঁয়ার আকাঙ্ক্ষা। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) বিভিন্ন বিভাগের এক ঝাঁক মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাংলানিউজের কাছে দেওয়া তাদের নতুন বছর নিয়ে কিছু ভাবনা নিচে তুলে ধরা হলো-
তানভির আহমেদ খান, ১ম বর্ষ , পুরকৌশল বিভাগ
নতুন বছর !! নতুনের প্রতি আকর্ষণ আর আকাঙ্ক্ষা আমার সব সময়ই আকাশছোঁয়া। নতুন বছরে দেখতে চাই অনেক কিছুই...বলে শেষ করার ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস নাই । চাওয়া আর পাওয়ার সমীকরণ দূরে থাক ...শুধু কি চাই দেখা যাক ।
আমি আত্মকেন্দ্রিক মানুষ । তাই শুরু নিজেকে দিয়ে ...
সাধারণ একটা বছর চাই ... খুব সাধারণ । কাছের মানুষগুলা আরও কাছে আসুক ... দূরের মানুষগুলাও আসুক কাছে । যেটা করতে চাই , সেটা করে ফেলা খুব দারুণ একটা ব্যাপার । যারা আমাকে ভালোভাবে জানে, তারা এইটাও জানে এই সহজ কাজটা আমি কখনও পারি না । নতুন বছরে আরও একটাবার চেষ্টা তো করাই যায় !!!
এই দেশের প্রায় সব মানুষ অল্প কিছু টাকার জন্য যে পরিমাণ কষ্ট সহ্য করে, সেটা রীতিমতো অকল্পনীয়। চাইব সব মানুষ এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাক ... তৈরি করুক অসংখ্য আনন্দনগর ।
কুয়েটকে সত্যিকারের একটা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেখতে চাই ... নামে বিশ্ববিদ্যালয় না । ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে যে যোজন যোজন দূরত্ব , কমে আসুক শূন্যের কোঠায় । আমরা যারা ছাত্র, রোবট থেকে হয়ে উঠি মানুষ ... মানুষের মতো মানুষ, সত্যিকারের মানুষ । জীবনটাকে দেখি নতুন আনন্দে , উপভোগ করি আর সৃষ্টি করি নতুন কিছু ।
রুশমিলা শাবনীন, ১ম বর্ষ , ইলেকট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
পুরাতন দিনগুলোকে পিছে ফেলে নতুন সালের নতুন দিনগুলোকে স্বাগতম। নতুন সালের সাথে জড়িয়ে থাকে নতুন স্বপ্ন,নতুন ভাবনা। পরিবার পরিজনকে ছেড়ে এই প্রথমবারের মত একা থাকছি খুলনায়। তাই নতুন দিনগুলোতে নতুন বন্ধু বান্ধবের সাথে হাসি খুশি আনন্দে মেতে থাকা এবং একজন শিক্ষার্থী হিসেবে ভালমত পড়াশোনা করে বাবা মা ও পরিবারের সকলকে এবং শিক্ষকদের খুশি করা আর পরবর্তীতে দেশের নাগরিক হিসেবে দেশের জন্য কিছু করাই আমার নতুন বছরের লক্ষ্য।
আশিক ইকবাল, ২য় বর্ষ, পুরকৌশল বিভাগ
প্রতিটা দিন প্রতিটা মুহূর্ত সামনে এগিয়ে নিয়ে চলেছে আমাদের পথচলাকে । এগিয়ে যাচ্ছে দেশ সমাজ আমি আমরা । তারই পরিক্রমায় সাফল্যের লক্ষ্যপূরণে আরও একটি ধাপে পদার্পন করতে চলেছি। নতুন দিনগুলোর জন্য সবাইকে শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানাই। আমাদের সমাজের অসহায় বঞ্চিত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে চাই । জানি তাদের দেওয়ার মত তেমন আহামরি কিছু আমিও এখনও অর্জন করতে পারিনি , তবুও স্বপ্ন দেখি একদিন এই যুগের সাথে তাল মেলাতে না পারা অথবা কখনও সুযোগই না পাওয়া এই মানুষগুলোকে সাথে করে নিয়েই প্রগ্রতির স্বপ্ন শিয়রে পদার্পন করতে পারব।
নওশাদ কবির আনন্দ, ২য় বর্ষ , পুরকৌশল বিভাগ
নতুন বছরের শুরুটা বাসাতে বাবা মা আত্মীয় স্বজন দের সাথেই করতে চাই । গত বছরটাতে হয়ত আমার প্রাপ্তির খাতার হিসাবের চেয়ে অপ্রাপ্তির খাতাই বেশি ভারী ছিল। তাই নতুন বছরে নিজেকে একটু হলেও ভেঙ্গেচুরে গড়বো এতটুকু প্রতিশ্রুতি নিজের কাছে রাখতেই পারি। নিজের সত্ত্বায় অল্প অল্প করে আরেকটু পরিমিতবোধ যোগ হয়েছে, না পাওয়ার আক্ষেপগুলো দূর হয়েছে; পরের বছরটা শেষে এই সময়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে এই অবস্থায় দেখতে চাই। সবার অনাগত বছরের সবটুকু সময় ভালোবাসার মানুষগুলোর সাথে অত্যন্তে আনন্দে কাটুক এটাই চাই। জীবনযুদ্ধে আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়াক, সফল মানুষগুলো উন্নতির পথে আরও
এগিয়ে যাক। নতুন বছরের শুভেচ্ছা সবাইকে।
রেদওয়ান আহমেদ রাহাত, ১ম বর্ষ , ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
নতুন বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে বিভিন্ন আয়োজনে অংশগ্রহণ আরো বাড়াতে চাই। বিশেষ করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন ও খেলাধুলা সংক্রান্ত বিভিন্ন আয়োজনের সাথে থাকতে চাই। এছাড়া স্কুল- কলেজ পর্যায়ে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য নিজের অবস্থানে থেকে কাজ করতে চাই। নতুন বছরে সবার ভালো হোক, সব ভালোর জন্য নতুন বছর আসুক এই প্রত্যাশায় ।
সাব্বির হায়দার সজল, ১ম বর্ষ , লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং
যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছি আমি বাঙ্গালি, সেদিন থেকেই বুকের মাঝখানে সবথেকে বড় অংশটাতে অনুভব করি দেশ নামক মায়ের জন্য এক প্রগাঢ় মমতা। আর এই মায়ের বুকে আরেকজন মা তার শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে হাহাকার করবে তা কীভাবে হয়। নতুন বছরে স্বপ্ন দেখি থাকবে না মায়ের বুকে কোন পথ শিশু, প্রাপ্য না পাওয়ার হতাশা নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া কোন শ্রমিক আর দু’মুঠো ভাতের জন্য শরীর বিক্রি করে দেওয়া কোন বোন।
ফাহমিদা ফারজানা অনন্যা, ১ম বর্ষ , তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগ
যেকোন উদ্দেশ্য নিয়ে অগ্রসর হয়ে সফল হতে হলে তার শুরুটা খুব যত্ন নিয়ে করতে হয়। কুয়েট জীবনের প্রথম বছরটা পার করছি তাই কিছু ভুল, কিছু অপূর্ণতা রয়েই গেছে। নতুন করে সব গুছিয়ে নেয়ার জন্য তাই বছরের শুরুটা খুব গুরুত্বপুর্ণ। যা যা ভেবে রেখেছি সেগুলো যেন মস্তিষ্কের নিউরন থেকে বাস্তব জীবনেও প্রতিফলিত করতে পারি সেটাই চাওয়া। কুয়েটের জন্য কিছু করতে চাই,যে মেয়েগুলো সামনের দিনগুলোতে কুয়েটে আসবে ওদেরকে একটা সুন্দর পথ করে দিতে চাই যাতে সেই পথ ধরে লক্ষ্যে পৌঁছানোটা সহজ হয়ে যায়। নতুন বছর সবার অনেক অনেক ভাল কাটুক,পুরনো ভুল ত্রুটিগুলো শুধরে সবাই সামনে এগিয়ে যাক।
মৌমিতা সুরভী মুনিয়া, ২য় বর্ষ , পুরকৌশল বিভাগ
গেল দিনের সব গ্লানি ভুলে এক গাদা উচ্ছাস , এক বুক স্বপ্ন নিয়ে পুরো বিশ্ব বরণ করে নেয় নতুন বছরকে। আমাদের দেশ তথা বিশ্ববিদ্যালয়েও আড়ম্বর-অনাড়ম্বর-ঘরোয়া বহির্মুখী আয়োজনে মুখরিত হয়ে ওঠে সময়।
আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী বা সমাজের সাধারণ নাগরিক হিসেবে এই আনন্দময় মুহূর্তগুলো আমার ও হতে পারত । কিন্তু শুধুমাত্র ভিন্ন শারীরিক গঠনের জন্য আমার জন্য এসব অনুষ্ঠানে যাওয়া নিরাপদ নয়। অবাক হয়ে যাই যখন আমার পাশে বসে ক্লাস করা ছেলেটির চাহনিতে দেখি কুৎসিত আকাঙ্ক্ষা । একই পথের পথিক হয়েও এই মানুষগুলোই হিংস্র হয়ে দাঁড়ায় আমার পথে । সমাজ ও কি অদ্ভূত! দোষীদের আটকানোর চেষ্টা না করে প্রোটেকশনের নামে বিরত রাখে মুক্ত আকাশের নিচে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে ।
ইস! সমাজ যদি আমাকে না আটকে এই কুৎসিত চিন্তাগুলোকে আটকাতো । শুধুমাত্র নতুন বছর নয় প্রত্যেকটি দিন প্রতিটা ক্ষণ এই ‘আমি’দেরকে দেওয়া হোক আমাদের আকাঙিক্ষত বিদ্যালয় , মহাবিদ্যালয় , বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কর্মক্ষেত্র ।
বাংলাদেশ সময় : ১৬৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪