ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

স্বপ্ন এবার আকাশ ছোঁয়ার

সাখাওয়াত আমিন, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫
স্বপ্ন এবার আকাশ ছোঁয়ার ছবি: রাজিব / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল আমার স্বপ্নের ক্যাম্পাস। বুঝ হওয়ার পর থেকেই স্বপ্ন দেখতাম, এ ক্যাম্পাস হবে আমার।

সে স্বপ্ন পূরণ হলো। গ্রাজুয়েট হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজ আনুষ্ঠানিক বিদায় নিচ্ছি। তাই স্বপ্নটা এবার আকাশ ছোঁয়ার। ’

শিক্ষাজীবনের সফল সমাপ্তি শেষে এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা জানাচ্ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করা শিক্ষার্থী জাহিদুল হাসান।

শুধু জাহিদের নয়, চোখে-মুখে এ স্বপ্নটা যেন ঠিকড়ে পড়ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯তম সমাবর্তনে অংশ নেওয়া ৬ হাজার গ্রাজুয়েটের প্রত্যেকের।

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের গ্রাজুয়েট হিসেবে প্রত্যাশা তাদের একটু বেশিই। শিক্ষাজীবনে যেমন সফলতা দেখিয়েছেন এবার তাকেই ফলপ্রসু করতে চান কর্মজীবনে। হতে চান স্বীয় ক্ষেত্রে এক একজন ‘আইকন’।

রীতি অনুযায়ী সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা আজ দেশের মূল্যবান সম্পদ। সমকালীন বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে নিজেকে অধিক যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। হতে হবে সাহসী ও ‍উদ্যমী। তবে নিজের আত্মপরিচয়ের কথা ভুলে গেলে চলবে না। দেশ, জনগণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ তোমাদের বিবেককে শাণিত করবে।

গ্রাজুয়েটদের সতর্ক করে তিনি বলেন, তোমাদের সামান্যতম নেতিবাচক কর্মকাণ্ডও আমাদের বিশাল অর্জনকে ম্লান করে দিতে পারে। সেদিকে তোমরা সব সময় সজাগ থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবর্তন উপলক্ষে দেওয়া তার বাণীতে বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ভাষাভিত্তিক জাতীয়তা বিকাশের ধারায় স্বাতন্ত্র্য চেতনা রক্ষার আন্দোলনসহ সকল গণআন্দোলনে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। ইতিহাসের দীর্ঘ পরিক্রমায় বুদ্ধিবৃত্তিক মেধা বিকাশে এর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী দেশপ্রেম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করবেন। দেশ ও জাতির উন্নয়নে তাদের অর্জিত জ্ঞান ও মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করবেন।

সমাবর্তন বক্তা  ছিলেন, জেনেভাভিত্তিক বিশ্ব মেধাস্বত্ত্ব সংগঠন-(The World Intellectual Property Organization-WIPO)- এর মহাপরিচালক ফ্রান্সিস গারি(Francis Gurry) ।

শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানার্জনের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, জ্ঞান হচ্ছে উৎপাদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে সে জ্ঞান হতে হবে প্রযুক্তিনির্ভর।

তিনি সমাবর্তন বক্তা হিসেবে তাকে আমন্ত্রণ জানানোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। ঢাবির পক্ষ থেকে তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’জ (Doctor of Laws) ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তার বক্তব্যে গ্রাজুয়েটদের বলেন, তোমরা কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেই প্রতিনিধিত্ব করো না, তোমরা দেশ জাতি ও বিশ্বের সম্পদ। আইনস্টাইনকে উদ্ধৃত করে তিনি আরও বলেন, ‘সফল মানুষ হওয়ার চেয়ে সৎ ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হওয়া অধিকতর জরুরি।

এদিকে সমাবর্তন উপলক্ষে গত রোববার থেকেই ক্যাম্পাসে বিরাজ করছিল সাজ সাজ রব। ওইদিন সকালেই অংশ নেওয়া প্রত্যেকের মাঝে বিতরণ করা হয় গিফট ও অ্যাকাডেমিক কস্টিউমস।

সমাবর্তনের সেই চিরচেনা কালো গাউন, টাই আর ‘গ্রাজুয়েট টুপি’ পরে সবাই ব্যস্ত ছিলেন ক্যাম্পাসের শেষ স্মৃতি ধরে রাখতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনের সকল বন্ধুদের একসঙ্গে হয়তো আর নাও পাওয়া যেতে পারে!

অনেকের হাতেই শোভা পায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ডিএসএলআর ক্যামেরা। সকলের তা না থাকলেও স্মার্টফোন তো আছে। তাই বাদ রাখা যাবে না ক্যাম্পাসের একটি জায়গাও।

টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য, অপরাজেয় বাংলা, ডাস, সিনেট ভবন কার্জন হলসহ প্রতিটি জায়গায়ই যেন হই-হুল্লোড় আর ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দ!

৪৯তম সমাবর্তনে মোট ৬ হাজার ১০৪ জনকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। তাদের মধ্যে ও ৩ হাজার ৩৬৭ জন মেয়ে ও ২ হাজার ৭৩৭ জন ছেলে।

ডিগ্রিপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন, পিএইডি ৪২ জন, এমফিল ২০ জন, স্বর্ণপদক ২৯ জন, এমডি, এমএস ৪৯ জন, অনার্স ৩ হাজার ১৬০ জন, মাস্টার্স ৫৬৫ জন, এমবিবিএস ১ হাজার ৬২৫ জন, বিডিএস ৩১৯ জন, নার্সিং ও ফিজিওথেরাপি ১৮৬ জন, হোমিওপ্যাথিক ও আয়ুর্বেদিক ১০৯ জন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।