ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

৯ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ ক্যাম্পাস!

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৫
৯ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ ক্যাম্পাস!

ঢাকা: কাগজে-কলমে দেশে ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।



এ ছাড়া ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি অনুমোদন ছাড়াই একাধিক ক্যাম্পাসের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

সরকারি অনুমোদন ব্যতিরেকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা অবৈধ হলেও হাইকোর্টের দোহাই দিয়ে এ সব বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধ ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আর যে ৫টি বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয় কাজ শুরু করতে পারেনি, তার মধ্যে আর্মির রয়েছে ৩টি। বাকি দুটি হলো- গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি ও টাইমস ইউনিভার্সিটি।  

বাংলাদেশ মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, উচ্চশিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ ও সম্প্রসারণ, সর্ব সাধারণের জন্য উচ্চ শিক্ষা সুলভকরণ এবং এর মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বর্তমান সরকারের আমলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন- ২০১০ সংসদে পাস হয়।

৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ ক্যাম্পাস
যে ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ ক্যাম্পাস রয়েছে,  সেগুলো হচ্ছে- দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্দার্ন উইনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (চট্টগ্রাম), ইবাইস ইউনিভার্সিটি ও আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি (চট্টগ্রাম)।
 
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আব্দুল কুদ্দুস বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক চিত্র নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ  পাওয়া গেছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগও রয়েছে।
 
তিনি বলেন, ইউজিসি’র প্রতিবেদন দেখেছি। তবে বুধবার (২৯ জুলাই) বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় হয়নি। আগামী মিটিংয়ে এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এছাড়া যে সব বিশ্ববিদ্যালয় এখনো নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি, তা‍দের আরো একবার সময় দেওয়া হবে। এর মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাস করতে না পারলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।
 
ইউজিসি’র প্রতিবেদন
এদিকে, ইউজিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের (ধানমণ্ডি, ঢাকা) বিভিন্ন অঞ্চলে অননুমোদিত শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে। আদালতের রায় নিয়ে আউটার ক্যাম্পাসও পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
 
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ খুলনা এবং ঢাকার মতিঝিলে অবৈধ দুটি ক্যাম্পাসের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে।
 
অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মিরপুর, পান্থপথ, উত্তরা ও পুরানা পল্টনে অবৈধ ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে।

সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (মেহেদীবাগ রোড, চট্টগ্রাম) চট্টগ্রাম শহরে ৩টি অবৈধ ক্যাম্পাস রয়েছে। নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের রাজশাহী ও খুলনায় অবৈধ ক্যাম্পাস রয়েছে।  

দি পিপলস ইউনির্ভাসিটি অব বাংলাদেশ, পুরানা পল্টন (মালিবাগ) ও প্রগতি সরণী (বাড্ডাতে) অবৈধ ক্যাম্পাস রয়েছে।

বিজিসি ট্রাস্ট আদালতের রায় নিয়ে চট্টগ্রামে দুটি অবৈধ ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

ইবাইস ইউনিভার্সিটি আদালতের রায় নিয়ে উত্তরা ও মোহাম্মদপুরে অবৈধ ক্যাম্পাসে শিক্ষা পরিচালনা করছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়. চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট অবৈধ ক্যাম্পাস মহিলা শাখায় শিক্ষা পরিচালনা করছে।
 
ইউজিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে সরকার নির্ধারিত জমিতে নিজস্ব ক্যাম্পাস রয়েছে ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে নয় তবে ট্রাস্ট বা ফাউন্ডেশনের নামে জমিতে অবকাঠামো এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়।

নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়। নির্ধারিত পরিমাণ জমির চাইতে কম জমিতে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে ১টি, নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণাধীন ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের, নির্ধারিত পরিমাণ জমি ক্রয় এবং ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে অনুমোদন রয়েছে তবে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে ৪টির।

ভবন নির্মাণের জন্য নকশা প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন ১০টির। নির্ধারিত পরিমাণ জমি ক্রয় করেছে, তবে জমি ব্যবহারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেনি এবং ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেয়নি ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের, নির্ধারিত পরিমাণ জমির চাইতে কম জমি ক্রয় করেছে ২টি বিশ্ববিদ্যালয়, জমি ক্রয় করেনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়।
 
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া করা বাড়িতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সাময়িক শর্ত ৫-৭ বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণপূর্বক স্থানান্তর হতে হবে। সরকার এবং ইউজিসি থেকে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
 
গবেষণা কাজে অনীহা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কাজে অনীহার প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি। এর মধ্যে ২০১৩ সালে ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণাখাতে কোনো অর্থ বরাদ্দই করেনি। এ ছাড়া ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় নামেমাত্র গবেষণা সম্পাদন করছে।

বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে, যা উচ্চশিক্ষার মোট শিক্ষার্থীর ৬২ শতাংশ।
 
বুধবার (২৯ জুলাই) শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১১তম বৈঠকে ইউজিসি এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন কমিটিতে দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৫/আপডেটেড: ১৮২১ ঘণ্টা
এসএম/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।